ছোট্ট সোনামনির হাতে কমবেশি সবাই মোবাইল তুলে দেন কোন না কোনো সময়। তবে কিছু সময়ের জন্য মোবাইল দেখা এক সময় আসক্তিতে পরিণত হয় শিশুর। তখন আর কোনোভাবেই মোবাইল ছাড়া বাচ্চাকে রাখা সম্ভব তো হয়ই না উপরন্তু যোগ হয় বাচ্চার খিটখিটে মেজাজ, অমনোযোগ, ঘুমের সমস্যা থেকে শুরু করে নানা সমস্যা।
কিশোর বয়সীদের মাঝেও দেখা যায় আচরণগত সমস্যা, বাবা-মায়ের সঙ্গে মনোমালিন্য, লেখাপড়ায় পিছিয়ে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দেয়। সন্তানের এরকম মোবাইল আসক্তির প্রতিকারে বাবা মা হিসেবে কী করবেন?
১. বাচ্চা খুব ছোট হলে তার চোখের সামনে কখনো ফোন ব্যবহার করবেন না কিংবা ফোন রাখবেন না। প্রয়োজনে আপনার কাছের মানুষ, আত্মীয় স্বজনদের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় রাখুন যে সময় আপনি তাদের সঙ্গে বা তারা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
২. শিশুর জন্য রং-বেরঙের আকর্ষণীয় বই কিনুন, সেগুলো নিয়ে তার সঙ্গে ইন্টারেক্টিভ সময় কাটান। তার সঙ্গে ছড়া বলুন বা গান করুন। শিশু হাসলে ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলে আপনিও হাসুন। বিভিন্ন রং পেন্সিল, রঙিন কাগজ এগুলো নিয়ে তার সঙ্গে বসে ছবি আকুন ও রং করুন।
৩. কিশোর বয়সীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের কুফল বুঝিয়ে বলুন। তাদের দৈনন্দিন কাজের একটি রুটিন তৈরি করে দিন। রুটিনটা হবে ঘুম থেকে ওঠা শুরু করে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত। এই রুটিনে সন্তানের লেখাপড়া থেকে শুরু করে, খাওয়াদাওয়া, গোসল, বিশ্রাম, বিনোদন ও তার সুকুমারবৃত্তিগুলোকেও রাখুন।
কিশোর বয়সীদের ক্ষেত্রে একেবারেই মোবাইল ব্যবহার না করতে দেওয়াটা আজকাল অসম্ভবই বলা যায়। সেক্ষেত্রে তার রুটিনে মোবাইল ব্যবহারের জন্যও একটি নির্ধারিত সময় রাখুন। এই রুটিন অনুসরণ করতে সন্তানকে উৎসাহ দিন। এজন্য তার পছন্দনীয় ছোট ছোট পুরস্কার দিতে পারেন।
৪. সন্তানের অন্যান্য ভালো কাজ, গুণগুলোর বেশি বেশি প্রশংসা করুন। সেগুলোর চর্চাকে উৎসাহিত করুন। তার ক্রিয়েটিভ গুনগুলোর চর্চাকালীন তার সঙ্গে সক্রিয় অংশ নিন। সুযোগ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রতিযোগীতামূলক অনুষ্ঠানে তার প্রতিভা প্রকাশের সুযোগ করে দিন।
৫. সন্তান যদি মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে রুটিন মানতে না চায় ও কান্নাকাটি, চিৎকার-চেঁচামেচি, রাগ-জেদ করে, তখন তাকে বকাঝকা বা মারধোর না করে ধৈর্য্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করুন।
বরং তার পছন্দের একটি জিনিস বা সুবিধা সরিয়ে নিন। এটাকে বলা হচ্ছে নেগেটিভ পানিশমেন্ট। নেগেটিভ পানিশমেন্ট, বিহেভিয়ার মডিফিকেশন থেরাপির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
পরিশেষে উপরোক্ত সব পদ্ধতি প্রয়োগ করার পরেও আপনি যদি সন্তানের অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারেন, তবে অবশ্যই একজন শিশু-কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরনাপন্ন হন।
লেখক: এমবিবিএস, এমডি (চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি) রেজিস্ট্রার, ডিপার্টমেন্ট অব সাইকিয়াট্রি, মেডিকেল কলেজ ফর উইমেন এন্ড হসপিটাল।