দাঁত ভালো রাখতে নিয়মিত এর যত্ন নিচ্ছেন অথচ দাঁতের রং পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে, এমন লক্ষণ কিন্তু কঠিন রোগের ইঙ্গিত দেয়। দাঁত বলে দিতে পারে হাজারো রোগের কথা। তাই সুস্থ সবল দাঁত দেখেই অনেকটা চেনা যায় শরীরের অবস্থা।
মুখের স্বাস্থ্যের অবহেলা করলে কী কী বিপদ হতে পারে? এ বিষয়ে জানিয়েছেন ভারতের মেদান্ত হসপিটাল লখনউয়ের ডেন্টাল সায়েন্সের চিকিৎসক রাগিনী সেহগল শেট্টি। তার মতে, মুখের স্বাস্থ্যকে অবহেলা করলে শরীরের একাধিক অঙ্গের হতে পারে।
তার মধ্যে অন্যতম হলো হার্টের অসুখ। এছাড়া পেটের স্বাস্থ্যও খারাপ হতে শুরু করে শুধু মুখে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়ার কারণে। একটা সময় খাবার চিবোনোর ক্ষমতা কমে যায়। এর ফলে খাবার অনেক বেছে বুঝে খেতে হয়। কম খাওয়ার ফলে ওজন কমতে থাকে ব্যক্তির।
এ বিষয়ে সাম্প্রতিক বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মুখের স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে হার্ট ও মেটাবলিক স্বাস্থ্য। দীর্ঘদিন ধরে মুখের স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা করলে হার্টের রোগের ঝুঁকি থাকে।
এমনকি ডায়াবেটিসের মতো ক্রনিক ব্যাধিও বাসা বাঁধতে পারে শরীরে। তাই স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত দাঁত মাজা, জিভ ও মাড়ি সাফ করা জরুরি।
কোন কোন খাবার মুখের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?
চিকিৎসক নিতিকার মতে, মুখের স্বাস্থ্যকে অবহেলা করলে মাড়ির রোগসহ নানা রোগ হতে পারে। এছাড়া হার্টের রোগ ও ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকিও থেকে যায়। দাঁত, মাড়ি ও মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বেশ কিছু পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক।
তার মতে, কিছু খাবার এড়িয়ে চললে মুখের স্বাস্থ্য অনেকটাই ভালো থাকে। যেমন- অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার, তামাকজাত দ্রব্যসেবন, বেশি কার্বযুক্ত খাবার ও মদ্যপান মুখের ভেতরের স্বাস্থ্য খারাপ করে তোলে।
দাঁতের রং বদলে যাওয়া কোন রোগের লক্ষণ?
দাঁত হলদে হওয়ার সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। যদিও বেশিরভাগ মানুষই একে সাধারণভাবেই দেখেন। আসলে অতিরিক্ত মসলাদার খাবার, ধূমপান, অ্যালকোহল, সোডা পান করা ও অযত্নে দাঁতের রং বদলে যায়।
তবে জানলে অবাক হবেন, শুধু অযত্ন নয় হলুদ দাঁতের পেছনে থাকতে পারে নানা ধরনের রোগের ইঙ্গিত। যা ধীরে ধীরে দাঁতকে ভেতর থেকে ফাঁপা করে দেয়।
মেডলাইনপ্লাসের মতে, ডেন্টিনোজেনেসিস অসম্পূর্ণতা দাঁতের একটি ব্যাধি। এতে আপনার দাঁতের রং বদলাতে শুরু করে। এই রং হলুদ-বাদামি, নীল-ধূসরের মতো হতে পারে। এই রোগে দাঁত দুর্বল হয়ে যায় ও ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
এছাড়া জিঞ্জিভাইটিস হলো দাঁত হলুদ হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ। এই সমস্যাকে মাড়ির সংক্রমণও বলা হয়। মুখের এই রোগের কারণে দাঁতে ব্যাকটেরিয়া জমতে শুরু করে। ফলে মাড়িও ফুলে যায়। দাঁতের স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা ও অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ ব্যবহার করে এড়ানো যায় এই সমস্যা।
লিভারের সমস্যার কারণেও দাঁতও হলুদ হয়ে যায়। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, রোগী যখন জন্ডিসের মতো লিভারের রোগে আক্রান্ত হয়, তখন শরীরে বিলিরুবিন বাড়তে থাকে। যার কারণে ত্বক, চোখ ও দাঁত হলুদ হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, কিছু ওষুধ, গর্ভাবস্থার সংক্রমণ, কেমোথেরাপি, ট্রমা, সিলিয়াক ডিজিজ এমনকি ইটিক ডিসঅর্ডারের কারণেও দাঁতের রং বদলাতে পারে।
কীভাবে দাঁতের যত্ন নেবেন?
১. দাঁতের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে নিয়মিত ওরাল চেকআপ করাতে হবে।
২. ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করতে হবে।
৩. প্রতিদিন অন্তত দু’বার দাঁত ব্রাশ করতে হবে।
৪. নিয়মিত অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন।