Vitamin-D -এর অভাব পূরণে কিছু টিপস জেনেনিন

ভিটামিন ডি এমন এক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যা মানবদেহের বিভিন্ন অর্গানের সুস্থতা নিশ্চিত করে।মূলত ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তে ফসফরাসের মাত্রা ঠিক রাখে। ফলে একদিকে যেমন হাড়ের ক্ষয় রোধ ও পুনর্গঠন করে তেমনি অন্য রোগের ঝুঁকিও কমিয়ে দেয়।

যদিও বাংলাদেশে এর প্রবণতা কম, তবুও ইদানিং শহুরে মানুষদের মধ্যে প্রায়ই ভিটামিন ডি ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।

যারা এর ঝুঁকিতে রয়েছেন

নিরামিষভোজীরা এই ঝুঁকির মধ্যে পড়েন কারণ যেসব খাবার থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় তার সবই আমিষ জাতীয় খাবার। যেমন ডিমের কুসুম, মাছ, মাছের তেল, দুধ এবং কলিজা।

যারা রোদের সংস্পর্শে একেবারেই যান না এবং তুলনামূলক অন্ধকার ও স্যাঁতস্যাঁতে ঘরের মধ্যে বেশি থাকেন বা মাথা ঢেকে লম্বা পোশাকে নিজেকে আবৃত রাখেন অথবা দিনের বেশির ভাগ সময় এসি রুমে থাকেন তারা ভিটামিন ডি ঘাটতির ঝুঁকিতে রয়েছেন।

সাধারণত গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালীন সময়ে ভিটামিন ডি’র অভাব বেশি দেখা যায়।

মায়ের ভিটামিন ডি’র অভাব থাকলে মাতৃদুগ্ধ পানকারী শিশুর মধ্যে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

অনুজ্জ্বল ত্বকের মানুষও এই ঝুঁকিতে রয়েছেন। অনুজ্জ্বল ত্বকে মেলানিনের পরিমাণ বেশি থাকে যা সূর্য থেকে ভিটামিন ডি তৈরির ক্ষমতা হ্রাস করে।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় ভাবে ভিটামিন ডি রূপান্তর বা তৈরি করতে কিডনির সক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে এই বয়সীদের মধ্যে ভিটামিন ডি ঘাটতি হতে পারে যা ঝুঁকিপূর্ণ।

লিভার বা কিডনির রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও ভিটামিন ডি’র ঘাটতির ঝুঁকিতে রয়েছে। এই রোগের কারণে খাদ্য বা সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি গ্রহণ করার ক্ষমতাও কম থাকে।

ভিটামিন ডি ঘাটতির কারণে যেসব রোগ হয়:

ভিটামিন ডির অভাবে শিশুদের রিকেট রোগ হয়। ফলে বাচ্চাদের হাত-পা বাঁকা হয়ে যায় এমনকি বিকলাঙ্গও হতে পারে। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্থ হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি না থাকে ফলে ঘনঘন ঠাণ্ডা ও অন্যান্য সংক্রমণ হতে থাকে।

ভিটামিন ডি হাড়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই ভিটামিন ঘাটতির কারণে অস্টিওপরোসিস দেখা দেয়। যা হাড়ের স্বাভাবিক ঘনত্ব কমিয়ে দেয় অর্থাৎ হাড় পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না। ফলে হাড়ের ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি পায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ভোগান্তিতে রূপ নেয়।

ভিটামিন ডি’র লেভেল কম থাকলে বয়স্কদের স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে অর্থাৎ চিন্তাশক্তিতে স্বচ্ছতা কমে যেতে পারে।

ভিটামিন ডি’র অভাবে দাঁতের গোড়া শক্ত হতে পারে না এবং অকালেই দাঁত পড়ে যায় এমনকি চোয়ালও বাঁকা হয়ে যায়।

এছাড়া দীর্ঘদিন ভিটামিন ডি’র অভাব থাকলে জটিল যেসব রোগের সম্ভাবনাও রয়েছে:

ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, ক্যানসার, মেদবৃদ্ধি, দূর্বল মাংসপেশি, বিষন্নতা, দূর্বলতা, আর্থরাইটিস, চুল পড়ে যাওয়া, অ্যাজমা, ক্রনিক ডিজিজ ইত্যাদি।

সুস্থ্ মানুষের কতটা ভিটামিন ডি প্রয়োজন?
মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের মেডিসিন ইনস্টিটিউট (IOM) এর তথ্যমতে বয়স অনুযায়ী কার কতটা ভিটামিন ডি প্রয়োজন তা নিচে দেয়া হলো। এক মাইক্রোগ্রাম সমান ৪০ আইইউ (আন্তর্জাতিক ইউনিট)

১২ মাসের কম বয়সি শিশু: ৪০০ আইইউ (১০ মাইক্রোগ্রাম)

১ থেকে ১৮ বছরের পর্যন্ত: ৬০০ আইইউ (১৫ মাইক্রোগ্রাম)

১৯ থেকে ৭০ বছরের জন্য: ৬০০ আইইউ (১৫ মাইক্রোগ্রাম)

৭১ থেকে তদুর্ধদের জন্য: ৮০০ আইইউ (২০ মাইক্রোগ্রাম)

গর্ভাবস্থায় এবং ব্রেস্ট ফিডিং করান এমন মায়েদের ক্ষেত্রে: ৬০০ আইইউ

ভিটামিন ডি পাওয়ার উপায়:

খাদ্যভ্যাসে পরিবর্তন এবং সূর্যের আলো থেকে এই ঘাটতি কমানো সম্ভব।

রোদে ভিটামিন ডি:

সূর্যের আলোর সংস্পর্শ, আপনার শরীরে ভিটামিন ডি উৎপাদন হতে সাহায্য করবে। তবে অতিরিক্ত সূর্য রশ্মি আবার ত্বকের জন্য ক্ষতিকরও বটে।

খাদ্যে ভিটামিন ডি:

ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার যেমন তেল সমৃদ্ধ মাছ (স্যালমন, টুনা এবং মেকারেল), গরু-খাসি-মহিষের কলিজা, ডিম, শুঁটকি, মাশরুম এবং পনির ইত্যাদি খাবারগুলো খাদ্যতালিকায় রাখলে ভরপুর ভিটামিন ডি পাওয়া যাবে। এছাড়া দুধ, সয়া প্রোডাক্ট, অরেঞ্জ জ্যুস ইত্যাদিতেও ভিটামিন ডি রয়েছে।

টিপস:

পুষ্টিবিদের পরামর্শানুযায়ী খাদ্যতালিকা গ্রহণ করুন

শিশুকে নিয়মিত তেল মেখে রোদে রাখুন

সকাল থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত অন্তত ৫ থেকে ৩০ মিনিট রোদে থাকুন।

তুলনামূলক কম উজ্জ্বল ত্বকের যারা তারা ১০ থেকে ৪০ মিনিট রোদে থাকুন।

অতিরিক্ত এসি রুমে না থাকার চেষ্টা করুন

কর্মক্ষেত্রে যাদের দীর্ঘসময় এসিতে থাকতে হয় তারা যে কোনো এক ফাঁকে রোদে থাকুন

আপনার শরীরে নানাবিধ ব্যথার কারণ ভিটামিন ডি’র ঘাটতি কিনা তা যাচাই করে দেখুন

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির মাত্রাও বেড়ে যায় তাই সকালের দিকের রোদই বেশি উপযোগী ভিটামিন ডি গ্রহণের জন্য। তাতে ত্বক পুড়ে যাওয়া বা ত্বকে নানা রোগ হওয়ারও সুযোগ থাকে না। রোদে যাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট পূর্বে সানস্ক্রীন ক্রিম ব্যবহারের চেষ্টা করুন।

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খাবেন না।

ধুমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ করুন

আপনার শরীরের নানান সমস্যার কারণ ভিটামিন ডি’র ঘাটতি নয়তো? যাচাই করে নিশ্চিত থাকুন। কারণ একটু সচেতনতা আর নিয়মানুবর্তিতাই পারবে আপনাকে নানাবিধ রোগ থেকে রক্ষা করতে। আর প্রকৃতি প্রদেয় পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ অন্তত কিছুটা হলেও চিকিৎসকের কাছে যাওয়ায় ভাটা পড়াবে।