সুস্থ পরিবার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে পারে এবং দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। একটি একটি করে অনেকগুলো ভালো অভ্যাসে গড়ে ওঠে একটি সুস্থ পরিবার। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের সমগ্র স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সুস্থ পরিবারের অবদান অনস্বীকার্য। আপনার পরিবারকে সুস্থ করতে চান? তাহলে এ প্রতিবেদনে আলোচিত সুস্থ পরিবারের অভ্যাসগুলো সম্পর্কে জেনে নিন। ছয় পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।
* তারা স্বাস্থ্যকর খাবার খান
পিতামাতারা সন্তানদেরকে খাবার নির্বাচনে প্রভাবিত করতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাবার ভোজনে মস্তিষ্কের কার্যক্রম উন্নত হয়। গবেষণা বলছে যে অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের পক্ষে স্বাস্থ্যকর খাবার ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করা কঠিন হয়, যার ফলে তারা প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অন্যান্য অস্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে ঝুঁকে পড়ে। পিতামাতারা বৈকালিক স্ন্যাকের জন্য কুকিজ, ক্রেকার্স অথবা সোডার পরিবর্তে বৈচিত্র্যময় হোল ফুডস কিনতে পারেন। আমি আমাদের বৈকালিক স্ন্যাকে অর্গানিক ফল ও শাকসবজির (যেমন- আপেল, বাদামের মাখন, আঙ্গুর, অ্যাভোকাডো, কলা, সেলেরি, পালংশাক ও কাঁচা কুমড়োর বীজ) অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করি।
– কোনি রজার্স, সার্টিফায়েড ইন্টিগ্রেটিভ নিউট্রিশনাল হলিস্টিক হেলথ কোচ ও লেখক
* তারা ধীরে খান
সুস্থ পরিবার খাওয়ার সময় তাড়াহুড়ো করেন না অথবা মানসিক চাপে থাকেন না। আমি হলাম দুই সন্তানের মা এবং আমরা খাবার টেবিলে শান্ত স্বরে কথা বলি ও প্রশান্তিদায়ক সংগীত শুনি। আমরা খাবার নির্বাচনে হজমে সমস্যা হয় না এমন খাবারকে প্রাধান্য দিই। আমরা স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খাবার খেয়ে থাকি, আমরা খাবার গপাগপ খাই না বা গিলে ফেলি না, আমরা খাবার খাই ধীরে সুস্থে চিবিয়ে। এ অভ্যাসটি নিশ্চিত করে যে খাবারের স্বাদ, বর্ণ ও সুগন্ধ উপভোগের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় সময় দিচ্ছি।
* তারা ভালোবাসা সহকারে বয়স্ক প্রিয়জনের সেবাযত্ন করেন
বয়স্ক প্রিয়জনকে সেবাযত্ন করা হলো ভালোবাসা প্রদর্শনের একটি চমৎকার উপায় এবং এর মানে এ নয় যে আপনাকে সবকিছু উৎসর্গ করতে হবে। সুস্থ পরিবার বয়স্ক পিতামাতা অথবা দাদা-দাদীকে অবহেলা করে না। বাচ্চা ও বিয়ে তাদের প্রতি আপনার আচরণকে ইতিবাচক অথবা নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে, কিন্তু আপনাকে ইতিবাচক থাকার জন্য চেষ্টা করতে হবে। বয়স্ক মা-বাবার কাছ থেকে সন্তানদের আলাদা করবেন না। সন্তানেরা দাদা-দাদীর কাছ থেকে যে ভালোবাসা পায় তা তাদের মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বয়স্ক পিতামাতা বা দাদা-দাদীকে যথাযথ মূল্যায়ন পুরো পরিবারকে প্রশান্তির ধারায় সিক্ত করতে পারে।
* তারা বৈবাহিক সম্পর্ককে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন
সুস্থ পরিবার অন্য যেকোনো সম্পর্কের চেয়ে বৈবাহিক সম্পর্ককেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেন। পারিবারিক সমস্যা সমাধান কিংবা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করেন। দম্পতি একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত ও শ্রদ্ধাশীল থাকলে পরিবারের সবাই সুখী ও সুস্থ থাকে।
* তারা একত্রিত হলে ডিভাইস বন্ধ রাখেন
সুস্থ পরিবার একত্রে সময় কাটানোর সময় ডিভাইস চালু রাখেন না বা ব্যবহার করেন না, যেমন- ফোন ও টেলিভিশন। শিক্ষা বা বিনোদনের জন্য একত্রে টিভি দেখা যেতেই পারে, কিন্তু সুস্থ পরিবার সবসময় ইলেক্ট্রনিকসের ওপর নির্ভর করেন না। তারা এমন কাজে জড়িত হন, যেখানে পরিবারের সবাই নিজের মতো মেধা খাটাতে পারে অথবা মতপ্রকাশ করতে পারে। এসব পারিবারিক কার্যক্রম বন্ধনকে দৃঢ় করে ও স্মৃতিকে দীর্ঘস্থায়ী করে।
* তারা একে অপরের সফলতা উদযাপন করেন
সুখী, সুস্থ পরিবার কোনো সন্তান যেন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন না হয় তার উপায় খোঁজেন। তারা সন্তানের মেধা শনাক্ত করেন এবং যেসব কাজে সন্তানদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাতে উৎসাহিত করেন অথবা সন্তানেরা আগ্রহ নিয়ে যে কাজ করে তাতে বাধা দেন না। তারা পরিবারের প্রত্যেকের সফলতা একত্রে উদযাপন করেন, এ উদযাপন হতে পারে ডিনার টেবিলে অথবা অন্য কোনো নির্ধারিত সময়ে।
* তারা খাবার টেবিলে আলাপ করেন
ডিনার টেবিলের অভিজ্ঞতা কেবলমাত্র সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার মধ্যেই সীমিত থাকা উচিত নয়, প্রকৃতপক্ষে সুস্থ পরিবার এ সময়টাতে কথাবার্তাও বলেন। এমন টপিক নিয়ে কথা বলুন যা পরিবারের সকল সদস্যের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারে এবং তা যেন পরিবারকে সৃজনশীল বা ইতিবাচক ভাবনায় উৎসাহিত করে। আলোচনায় একজন নেতৃত্ব দিতে পারেন বা উপস্থাপকের ভূমিকা পালন করতে পারেন এবং সে অনুসারে তিনি যেন নিজেকে প্রস্তুত রাখেন। পরিবারের অন্য সদস্যরা তাকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারেন, এর ফলে উপস্থাপক জটিল প্রশ্ন মোকাবেলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার তাড়না অনুভব করবে, যা বাইরের পরিস্থিতি সামলাতেও সাহায্য করে।
* তারা প্রতিদিন একসঙ্গে একবেলা খাবার খান
এমন একটি সময় নির্ধারণ করুন যে সময়টাতে পরিবারের সবাই একসঙ্গে খাবার খাওয়ার জন্য উপস্থিত থাকতে পারে। একসঙ্গে খাবার খাওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো ডিনার টাইম। ডিনার টেবিলে যেন স্ত্রী, মা-বাবা, ভাই-বোন ও সন্তান-সন্ততি সকলের উপস্থিতি থাকে। যদি এ সময়টাতে সকলের পক্ষে উপস্থিত থাকা সম্ভব না হয়, তাহলে একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট করতে পারেন। ডিনার বা ব্রেকফাস্ট- একসঙ্গে যেটাই করেন না কেন তা যেন নিয়মে পরিণত হয়, এর ফলে পরিবারের সদস্যরা একে অপরের অপেক্ষায় থাকে এবং তা পারিবারিক অনুভূতির সুতাকে মজবুত করে।