সেই ছোট থেকে রোবটের মত নিয়ম মেনে আসছি। কিন্তু সেই নিয়মের পিছনে কি আদৌ কোনও যুক্তি রয়েছে, নাকি পুরোটাই ভুল ধরণার ফসল?
জন্মানোর কিছু সময় পর থেকেই নবজাতককে স্নান করানো শুরু হয়ে যায়। সেই শুরু! যত দিন না মৃত্যু কোলে কেউ ঢলে পরছে, ততদিন চলতেই থাকে স্নান। কখনও দিনে একবার, কখনও-সখনও তো দু-তিনবার। কিন্তু স্নান কেন করে মানুষ? কেই বা শেখালো আমাদের স্নান করানো?
পরের প্রশ্নের উত্তর জানা না গেলেও প্রথমটির উত্তর দিতে গিয়ে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন শরীরকে রোগমুক্ত এবং চাঙ্গা রাখতে স্নানের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাই স্নান শুধু অভ্যাস বা দৈনিক রুটিনের একটা অংশ নয়, আরও বেশি কিছু!
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ক্লান্তি এবং গায়ের গন্ধ দূর করার পাশাপাশি স্নান করার অভ্যাস আরও অনেক উপকারে লাগে। যেমন…
১. পেশির কর্মক্ষমতা বাড়ায়:
সারা দিন ধরে কাজ করতে করতে আমাদের সারা শরীরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা পেশিরা যেমন ক্লান্ত হয়ে পরে, তেমনি তাদের গায়ে বেজায় চোট-আঘাতও লাগে। এমন অবস্থায় দিনের শেষে হলকা গরম জলে অথবা ঠান্ডা জলে স্নান করলে পেশির চোট সারতে শুরু করে। সেই সঙ্গে তারা পুনরায় চাঙ্গা হয়ে ওঠে। প্রসঙ্গত, পেশির সচলতা বৃদ্ধির পিছনে স্নানের যে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন গবেষকরাও।
২. রক্ত প্রবাহের উন্নতি ঘটে:
গবেষণায় দেখা গেছে স্নান করার সময় ঠান্ডা জলের স্পর্শ লাগার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সারা শরীরে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ বেড়ে যায়। ফলে একদিকে যেমন হার্টের পাশাপাশি দেহের ভাইটাল অর্গানদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, তেমনি অন্যদিকে রক্তচাপও কমতে থাকে। ফলে সার্বিকভাবে শরীর একেবারে তরতাজা হয়ে ওঠে।
৩. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে :
স্নানের সঙ্গে ডায়াবেটিস রোগের কী সম্পর্ক? গবেষণা বলছে ডায়াবেটিস রোগীরা যদি টানা ৩ সপ্তাহ, দৈনিক ২০-৩০ মিনিট গরম জলে স্নান করেন, তাহলে রক্তে শর্করার মাত্রা প্রায় ১৩ শতাংশ কমে যায়। ফলে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
শুধু ঠান্ডা নয়, গরম জলে স্নান করার সময়ও ভাসকুলার এবং লিম্ফ সিস্টেম থেকে প্রচুর মাত্রায় ইমিউন সেলের জন্ম হতে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে থাকে। আর যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা আছে, রোগ প্রতিরোধ ব্য়বস্থা যত শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তত রোগভোগের আশঙ্কা হ্রাস পায়। এবার বুঝেছেন তো প্রতিদিন স্নান করার গুরুত্ব কতটা!
৫. স্ট্রেস এবং মানসিক চাপ কমায়:
দিন শেষে ক্লান্তি এবং স্টেস যখন ঘারে চেপে বসে, তখন যেন পা এগতে চায় না। মনে হয় জীবনটা যেন থেমে গেছে কোনও বোল্ডারে বাঁধা পেয়ে। এমন অবস্থায় মহৌষধির কাজ করে এক বালতি ঠান্ডা জল। সেটা যখন মাথা হয়ে সারা শরীরে ঝাপিয়ে পরে, তখন আমাদের মস্তিষ্কের অন্দরে বিটা-এন্ডোরফিন এবং নোরাএড্রেনালিনের মতো হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে নিমেষে স্ট্রেস এবং ডিপ্রেশন কমে গিয়ে মন চাঙ্গা হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে ক্লান্ত জীবন ফিরে পায় তার হারিয়ে যাওয়া মরুদ্যান!
৬. ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়ে:
বেশ কিছু কেস স্টাডিতে দেখা গেছে প্রতিবার ঠান্ডা জন মাথায় ঢালার সময় কোনও এক অজানা কারণে আমাদের ফুসফুস সংকুচিত হয়ে যায়। এমনটা বারে বারে হওয়ার কারণে লাং-এ অক্সিজেনের সরবরাহ বেড়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, যে হারে আজকাল বায়ুদূষণের প্রকোপ বাড়ছে তাতে ফুসফুসকে অতিরিক্ত চাঙ্গা না রাখলে কিন্তু বিপদ! তাই যতই ল্যাথারজিক লাগুক না কেন, প্রতিদিন সকাল-বিকাল স্নান করা মাস্ট!