এমনকি ‘রাত জাগা পাখি’ হলেও সকালে ওঠার অভ্যাস গড়া যায় সহজেই।
একেকটা ভোর একেকটা নতুন দিনের স্বপ্ন দেখায়- আপনি যদি ‘সকাল বেলার পাখি’ হন, তবে এই কথা আপনার জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু যে রাত জাগা পেঁচা তার কী হবে?
তারও উপায় আছে। তবে কষ্ট করে কটা দিন মানতে হবে কিছু সহজ নিয়ম। তাহলেই সকালে ওঠার অভ্যাস হয়ে যাবে। আর সকালে উঠে চাঙ্গা থাকারও রয়েছে পন্থা।
ছন্দময় অ্যালার্ম: সকালে ওঠার জন্য কর্কশ বা জোড়ালো শব্দের অ্যালার্মের চাইতে ছন্দময় অ্যালার্ম ঘুম ভালোভাবে ভাঙাতে বেশি সাহায্য করে। কারণ জোড়ালো শব্দে ঘুম ভাঙলে এক ধরনের ক্লান্তি ভর করে শরীরে।
‘ইউ এস ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’ সাময়িকীতে প্রকাশিত মেলবোর্নের ‘আরএমআইটি’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অফ মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেইশন’য়ের করা গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, ছন্দময় অ্যালার্ম- যেমন পপ সঙ্গীত, ছন্দময় যন্ত্রসঙ্গীত অথবা প্রকৃতির শব্দ যেমন পাখির কলকাকলি, সুন্দরভাবে ঘুম ভাঙাতে সাহায্য করে।
হেল্থলাইন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ২০২০ সালে করা এই গবেষণা ছাড়াও ২০১৬ সালে ‘ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ অস্ট্রেলিয়া’র করা গবেষণাও একই তথ্য দেয়।
তাই ভোরের স্বপ্ন দেখতে দেখতে স্বপ্নময় ঘুম ভাঙার সুন্দর পদ্ধতি হতে পারে ছন্দময় অ্যালার্ম।
আলো আসুক: প্রাকৃতিক আলো সকালের রুটিনে দারুণ প্রভাব ফেলে। সূর্যের আলো দেহঘড়িকে আলোড়িত করতে পারে। যা আসলে সকালে ঘুম থেকে ওঠার সংকেত দেয়।
দিনের আলো শুধু ঘুমই ভাঙায় না, সকালের আলো গায়ে মাখলে তা সন্ধ্যার পর তাড়াতাড়ি ঘুমানোর সংকেত হিসেবেও কাজ করে।
তাই সকাল হলেই পর্দা সরিয়ে ঘরে আলো আসতে দিন। কোলাহল শুরু হওয়ার আগেই বুক ভরে নিন সকালের নির্মল বাতাস।
মুখ ধোয়: নতুন করে বলার কিছু নেই। ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে গড়িমসি না করে কুসুম গরম বা ঠাণ্ডা জল দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে নিতে হবে। যা কিনা শরীরের জড়তা কাটানোর পাশাপাশি চোখের ক্লান্তিও দূর করবে।
পুষ্টিকর নাস্তা: প্রোটিন সমৃদ্ধ নাস্তা করার ভালো ফলাফল বিভিন্ন গবেষণাতেই উঠে এসেছে। সকালে অভুক্ত থাকলে দুর্বল লাগবেই। তাই নাস্তার জন্য বেছে নিতে হবে ফল, সবজি, লাল আটার রুটি, ডিম ও সাধারণ টক দই।
আর আর্দ্র থাকতে অবশ্যই চা বা কফি পান করা ভালো। তাই বলে জল পানের কথা ভোলা যাবে না। ধীরে ধীরে অন্তত দু গ্লাস জল সকালে নাস্তায় গ্রহণ করার অভ্যাস করা উচিত।
শরীর নাড়াচাড়া করা: ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়তে পারলে ভালো। না হলে অন্তত ‘স্ট্রেচিং’ করা উচিত। হাত-পা টানটান করার মাধ্যমে শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ে। ফলে মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পৌঁছায়। আর শরীরে জড়তা কাটিয়ে চাঙ্গা অনুভব আনে।
টুকটাক কাজ করা: সকালে উঠে কাজ করতে ভালো না লাগলেও, ঘরের টুকটাক কাজ করার চেষ্টা করতে হবে। যেমন- নিজের বিছানাটা গোছানো, নাস্তার থালাবাটি ধোয়া ও গুছিয়ে রাখা, ময়লা কাপড় চোপড় ধোয়ার জন্য জড়ো করে রাখা ইত্যাদি।
সারাদিনের কাজে তালিকা করা: দিনের বিভিন্ন সময় কী কী কাজ বাকি আছে সেগুলোর একটা তালিকা সকালেই তৈরির অভ্যাস গড়ে তোলা ভালো।
এতে দুটি সুবিধা হয়। এক, মস্তিষ্ককে একটু খাটানো যায়। আর দ্বিতীয়টি হল কাজগুলো ঠিক মতো করার পাশাপাশি পরের দিনের কাজও গুছিয়ে ফেলা যায়।
আনন্দ দেয় এমন কিছু করতে হবে: প্রতিদিন সকালে উঠেই যে ফলদায়ক কিছু করতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। সকালে তাই নিজের পছন্দসই কাজগুলোও করা যেতে পারে।
সেটা হতে পারে- গেইম খেলা, প্রিয় সিরিয়াল দেখা, গান শোনা, বই পড়া ইত্যাদি।
এই মজাগুলো দিনের শেষভাগে করার চাইতে প্রথমভাগে করলে, রাত জাগার অভ্যাস অনেকটাই কমে আসবে।
প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগ: বন্ধু, আত্মিয় বা প্রিয়মানুষের সঙ্গে সারাদিনে তো কথা হয়ই। তবে সকালবেলাতেই সাধারণ শুভেচ্ছা দিয়ে দিনের শুরু করাটা কিন্তু অন্য মাত্রা দেবে।
সকালে উঠে অনেকেরই কথা বলতে ভালোলাগে না। তবে প্রিয়মানুষদের সঙ্গে সাধারণ শুভেচ্ছা বিনিময় সকালটা আরও অর্থবহ করে তুলবে।
আসল কথা হল
জীবনে সকালের আগমন তো ঠেকানো যাবে না। তাই নিজের ভালো লাগার মতো সকালের জন্য রুটিন তৈরি করে নিতে হবে। আর মনে রাখতে হবে সুন্দর সকালের জন্য চাই সুন্দর রাতের রুটিন। আর সেটার প্রথম ধাপই হল তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া