পরিবর্তনই জীবন। প্রতিদিন সব কিছু বদলে যাচ্ছে। সেই বদলের সঙ্গে বদলাতে হবে। বদলের ফায়দা তুলতে হবে। তবেই জীবন থাকবে। না হয় একদিন ফুরুৎ করে প্রাণ বায়ু খাঁচা থেকে হঠাৎ মুক্তি পাওয়া মুনিয়ার মতো উড়ে পালাবে কিন্তু! বিজ্ঞান প্রতিদিন বদলাচ্ছে। তার সঙ্গে বদলে যাচ্ছে ধারণাও। তাই তো পুরনো জামার মতো পুরনো ধারণাকে ঝেড়ে ফেলে দিন। গায়ে তুলে নিন নতুন অবিষ্কারকে। দেখবেন উপকার পাবেন। যেমন দৌড়ানোর কথা ধরুন না। এতদিন জানতাম সকাল বিকাল সামনের দিকে দৌড়ালে উপকার পাযওা যায়। চর্বি ঝড়ে, রক্ত শরীরে এদিক থেকে সেদিকে পৌঁছে যাওয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু এখন বিজ্ঞানিরা কি বলছেন জানেন! একাধিক গবেষণায় নাকি প্রমাণিত হয়েছে সামনের দিকে নয় , বরং পিছনের দিকে দৌড়ালে নাকি বেশি উপকার পাওয়া যায়। আরে দাঁড়ান দাঁড়ান, এখন ও অবাক হতে বাকি আছে!
কয়েকশো বছর আগে থেকেই পিছনের দিকে দৌড়ানোর প্রথা রয়েছে জাপানে, কিন্তু সে নিয়ে বাকি গোলার্ধ তেমন একটা ভাবিত ছিল না। তবে যবে থেকে একটু একটু করে পেছনে মুখি দৌড়ের উপকারিতা উদিত সূর্যের দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাকি অংশে ছড়িয়ে পরতে শুরু করেছে, তখন থেকেই নরে বসেছেন পশ্চিমী দেশের বিজ্ঞানিরা। সত্যিই কি পেছন দিকে করে দৌড়ালে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়? এই নিয়ে শুরু হয়েছে গবেষণা। তাতে যা জানা গেছে তা সত্যিই চমকপ্রদ।
গবেষণা চলাকালীন গবেষকরা লক্ষ করেছিলেন পিছনে দিকে দৌড়ানোর সময় পায়ের পেশীকে বেশি কাজে লাগাতে হয়, ফলে পেশীর কর্মক্ষমতা চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে প্রচুর মাত্রায় ক্যালরিও বার্ন হয়। স্বাভাবিকভাবে দৌড়ানোর সময় যে পরিমাণ চর্বি ঝড়ে, তার থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি ঝড়ে উল্টো হয়ে দৌড়ানোর সময়। এখানেই শেষ নয়! উল্টো দিকে দৌড়ানোর আরও অনেক উপকারিতা আছে। যেমন…
১. শরীরের গঠন ঠিক হয়: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে পিছনের দিকে দৌড়ানোর সময় প্রতি মুহূর্তে শরীরকে সোজা রাখতে হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই “বডি পসচার” বা শরীরের গঠন একেবারে ঠিক হয়ে যায়। অনেকই আছেন, যারা কম বয়সেই সামনের দিকে ঝুঁকে পরেছেন, তারা এবার থেকে প্রতিদিন পেছনের দিকে দৌড়ান, দেখবেন উপকার পাবেন।
২. ওজন কমে বেশি: যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে, পিছনের দিকে দৌড়ালে বেশি ক্যালরি ঝড়ে। ফলে ওজন কমে তড়তড়িয়ে। তাই যারা অতিরিক্ত ওজনের কারণে বেশ চিন্তায় রয়েছেন, তারা এই নতুন পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে দেখতে পারেন। উপকার যে পাবেন, তা হলফ করে বলতে পারি।
৩. হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে: পেছন দিকে দৌড়ানোর সময় বেশি মাত্রায় কসরত করতে হয়। ফলে একদিকে যেমন শরীররে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, তেমনি অন্যদিকে বেশি মাত্রায় রক্ত পাম্প করতে করতে হার্টের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটে।
৪. মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়: নিউরোলজিস্টরা লক্ষ করে দেখেছেন, রোজ একই ভাবে করতে থাকা কোনও কাজ যদি হঠাৎ করে অন্যভাবে করতে শুরু করা হয়, তাহলে মস্তিষ্কের মধ্য়ে ইলেকট্রিকাল পালসের আদান-প্রদান বেড়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তিরও উন্নতি ঘটে। তাই তো স্বাভাবিকভাবে দৌড়াতে দৌড়াতে যদি হঠাৎ করে পেছনের দিকে কেউ দৌড়ানো শুরু করেন, তাদের শরীরের তো বটেই, সেই সঙ্গে মস্তিষ্কেরও কর্মক্ষমতা চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পায়।
৫. পেশির গঠনে উন্নতি ঘটে: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে পেছনের দিকে দৌড়ানোর সময় ঘাড় থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত শরীরে প্রতি পেশীকে বেশি বেশি করে কাজ করতে হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি পেশীর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পতে শুরু করে। সেই সঙ্গে শরীরের সচলতারও উন্নতি ঘটে।
৬. চোট আঘাতেও দৌড়াতে পারবেন: হাঁটুতে বা কোমরে ব্যথার কারণে আর দৌড় বন্ধ করার প্রয়োজন পরবে না, যদি পিছনের দিকে দৌড়ানোর অভ্যাস করে নেন তো। আসলে সামনের দিকে দৌড়ানোর সময় হাঁটু, গোড়ালি এবংহ্যামস্ট্রিং-এর উপর মারাত্মক চাপ পরে। ফলে চোট আঘাতে দৌড়ানো সম্ভব হয় না। কিন্তু পেছনের দিকে দৌড়ালে একেবারে উল্টো ঘটনা ঘটে, এক্ষেত্রে চোট আঘাতের উপর চাপ তো পরেই না, বরং তাড়তাড়ি চোট সেরে যায়। সেই সঙ্গে হাঁটু এবং গোড়ালির সচলতা বৃদ্ধি পায়। ফলে সার্বিকভাবে শরীরের নিচের অংশের ক্ষমতা কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।