গ্রাম বাংলার লোকসমাজে লোকসংস্কৃতি ও গ্রামীণ মেলার গুরুত্ব অপরিসীম। বৈচিত্র্যপূর্ণ এই সব মেলার তথ্য অনুসন্ধান সামগ্রিক অর্থে জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীনকাল থেকে ইতিহাসবিদ ও বিদেশী পর্যটকদের বিভিন্ন বর্ণনায় গ্রামীণ মেলার বর্ণনা না থাকলেও বাণিজ্যিক সম্পর্কের আদান-প্রদানের স্বতন্ত্রতার পরিচয় পাওয়া যায়। লোকসংস্কৃতি ও গ্রামীণ মেলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় বহন করে। তবে উনবিংশ শতকের গোড়ায় বুক কানন হ্যামিলটন পূর্বে কোন নির্দিষ্ট অঞ্চল ভিত্তিক উল্লেখ ছিল না। ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে গভর্নর জেনারেল ইন কাউন্সিল এর কর্মসূচিতে যা ছিল তা নিতান্তই বিভিন্ন জিনিসপত্রের আমদানি রপ্তানি ও কেনাবেচার বাজার ও মেলা কেন্দ্রিক তথ্য। যদিও তা নির্দিষ্ট অঞ্চল ভিত্তিক এবং মেলার ক্ষেত্রে তা বিশেষ উল্লেখনীয় নয়।
ডাব্লিউ ডাব্লিউ হান্টার উনবিংশ শতকের শেষ ভাগের বর্ণনায় মেলা উৎসবের বিষয়ে কিছু আলোকপাত করেছেন। যদিও ওই শতকের মাঝামাঝি সময়ে বঙ্গ বাসানুবাদক সমাজ প্রকাশিত পঞ্জিকার (১২৬২ বঙ্গাব্দ) দ্বিতীয় ভাগে বাংলার ৩০৯ টি মেলার তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল। ভিন্ন ভিন্ন জেলার নাম মেলার বিষয় পরবর্তীকালে সি.এ বেন্টালির “ফেয়ারস এন্ড ফেস্টিভার্স ইন বেঙ্গল” (১৯২৯) গ্রন্থটির মূল্ উদ্দেশ্য ছিল স্বাস্থ্য বিধি রক্ষা প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করা।
গ্রাম বাংলার লোকহিত সমাজে সাংস্কৃতিক চৌহদ্দির প্রেক্ষাপটে রুপারেখা পরিবর্তনের উল্লেখযোগ্য মেলা সমূহের তথ্য সন্ধান প্রয়োজনীয়। লোক্ ঐতিহ্যের পটভূমিতে গ্রাম বাংলার মেলা আলোচনা ও চর্চা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত হবে।
মেলার উপলক্ষে ও প্রাচিনত্বের নিরিখে জনগোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক, ধর্মীয়, লৌকিক শিল্প ও ঐতিহ্যের পরম্পরার প্রেক্ষাপট বুঝতে সাহায্য করবে।
সাহিত্যগত দিক দিয়ে যদি এর পর্যবেক্ষণ করি তাহলে আমরা দেখি গ্রামের লোকসংস্কৃতির সাহিত্যিক তাৎপর্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এ দেশের সর্বত্রই লোকসংস্কৃতির বৈচিত্র্যপূর্ণ উপাদান ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আমাদের দেশ ভূখণ্ডগত দিক থেকে বৃহত্তর না হলেও নিজস্ব সংস্কৃতি তথা লুকোচর্চার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দিক থেকে অন্যন্য।