এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকার সংক্রমণে অ্যামিবিয়াসিস বা অ্যামিবিক ডিসেন্ট্রি বা আমাশয় হয়ে থাকে। এন্টামিবা স্বচ্ছ জেলির মতো একধরনের এককোষী জীবাণু, যাদের খালি চোখে দেখা যায় না। এদের আকার ও আকৃতি পরিবর্তনশীল। তবে প্রতিকূল পরিবেশে এরা গোলাকার শক্ত আবরণে নিজেদের দেহ ঢেকে ফেলে। এ অবস্থায় এদেরকে সিস্ট বলে, যা মানুষের শরীরের বাইরে ৩ মাস পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
গ্রামীণ ও জনবহুল এলাকা, বিশেষ করে যেসব জায়গার স্যানিটেশনব্যবস্থা দুর্বল, ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, সেখানকার শিশু ও কম রোগ প্রতিরোধক্ষমতাসম্পন্ন মানুষদের ঘন ঘন রক্ত আমাশয় হয়। তবে পুরুষের সংক্রমণের হার নারীর তুলনায় বেশি। প্রতিবছর বিশ্বের ৫০ কোটি মানুষ এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকায় সংক্রমিত হন, মারা যান প্রায় এক লাখ।
সংক্রমণ
এন্টামিবার জীবনচক্রে তিনটি পর্যায় থাকে। ট্রফোজয়েট, প্রি-সিস্ট এবং সিস্ট।
মানুষের পাকস্থলীর গ্যাস্ট্রিক রস সিস্ট প্রাচীরকে নষ্ট করতে পারে না। ফলে সিস্ট থেকে ট্রফোজয়েট পর্যায়ে পরিবর্তিত হয় এবং বৃহদন্ত্রে এদের সংক্রমণে এমিবিক আমাশয় নামক রোগ সৃষ্টি হয়। ট্রফোজয়েটগুলো অন্ত্রে ক্ষত বা আলসার তৈরি করে, ফলে আমাশয় হয়। প্রথমে ক্ষতগুলো ছোট হলেও অনেকগুলো একসঙ্গে বড় ক্ষত তৈরি করে। এমনকি অন্ত্র ছিদ্রও করতে পারে।
মলের সঙ্গে সিস্ট এবং কখনো কখনো ট্রফোজয়েট বের হয়ে আসে। সিস্টগুলো মাটি, পানি, শাকসবজি, ফলমূল ও খাদ্যসামগ্রীতে অনেক দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
উপসর্গ
ডায়রিয়ার সঙ্গে রক্তপাত, পেটব্যথা, ক্লান্তি, জ্বর, খাবারে অরুচি, পেট ফাঁপা, ওজন হ্রাস, ইত্যাদি এ সংক্রমণের উপসর্গ। অ্যামিবা অন্ত্রের দেয়ালে আলসার বা ক্ষত তৈরির পাশাপাশি রক্তনালীর মাধ্যমে রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করতে পারে এবং শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোকে সংক্রমণ করে। সাধারণত লিভার সংক্রমণ বেশি হয়। তবে মস্তিষ্ক, ফুসফুস, কিডনি, প্লীহাতেও যেতে পারে এবং আক্রান্ত অঙ্গে এমিবিক ফোঁড়া হতে পারে। যা দ্রুত চিকিৎসা করা না হলে মারাত্মক জটিলতার আশঙ্কা থাকে।
রোগ নির্ণয়
রোগের লক্ষণ এবং রোগের সঠিক ইতিহাস শুনেই মূলত এই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। মল ও রক্ত পরীক্ষা ছাড়াও আল্ট্রাসাউন্ড ও সিটি স্ক্যানের মতো পরীক্ষার মাধ্যমে এন্টামোইবা হিস্টোলাইটিকা সংক্রমণ নির্ণয় করা যেতে পারে।
মলে প্রধানত সিস্ট এবং কখনো কখনো ট্রফোজয়েট (ফ্রেশ মল) মাইক্রোস্কোপে দেখেও আমরা রোগ নির্ণয় করতে পারি। তাছাড়া অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডি নির্ণয় এবং পিসিআর করেও এই জীবাণু চিহ্নিত করা সম্ভব।
প্রতিরোধ
এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা প্রতিরোধের জন্য স্যানিটেশন ব্যাবস্থার উন্নতি করতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। খাবার খাওয়ার আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পরে অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে। পানি ফুটিয়ে খেতে হবে। মছি বা তেলাপোকা যেন খাবার দূষিত করতে না পারে, সে খেয়াল রাখতে হবে। কাঁচা বা সবুজ সালাদ-ফলমূল ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে খেতে হবে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা দিতে হবে।