কান আমাদের শরীরের একটি খুবই সংবেদনশীল অঙ্গ। শোনার পাশাপাশি শরীরের ভারসাম্য রাখতেও সাহায্য করে। এই সংবেদনশীল অঙ্গটি খুঁচিয়ে ঘা করা অর্থহীন। কানের ময়লা নিজে থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায়। খোঁচাখুচিঁতে সংক্রমণের ঝুঁকি প্রবল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবসর সময়ে কিংবা কাজের মাঝে সুযোগ পেলেই কান খোঁচানোর অভ্যাস আছে অনেকেরই। আরাম লাগে নিঃসন্দেহে। তবে ইনফেকশনের ঝুঁকি আছে এতে। অনেক কারণেই কানে ইনফেকশন হয়। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ ধরা না পরলে আরো মারাত্মক হতে পারে।
সংক্রমণের কারণ
কানের চামড়ার একটি মাত্র স্তর থাকে। তাই সূক্ষ্ম আঘাতেও ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। যার কারণ হতে পারে কোনো ছত্রাক কিংবা ব্যাকটিরিয়াল সংক্রমণ। অনেক সময় গঠনগত কারণে শিশুদের অ্যাডিনয়েড গ্রন্থি বড় থাকে। ফলে ইউস্টেশিয়ান টিউব অর্থাৎ নাক ও কানের মাঝের টিউবটিতে তরল জমে শিশুদের কানে ব্যথা হয়।
এছাড়া হেডফোন বেশি ব্যবহার কিংবা কানে কোনো কাঠি, নিম্নমানের বাডস দিয়ে খোঁচালে, সর্দি-কাশির সমস্যায় ঠিকমতো চিকিৎসা না করলে, সাঁতার কাটা বা স্নান করার সময় কানে জল ঢুকলে, গলা ও নাকে হওয়া ব্যাকটিরিয়াল ইনফেকশন থেকে ও বর্ষাকালে অটো মাইকোসিস নামে এক ধরনের ছত্রাক ঘটিত রোগ থেকেও কানে ইনফেকশন হয়।
সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে কানের ইনফেকশন থেকে ক্রনিক ওটিটিস হতে পারে। কানের পর্দায় ছিদ্র কিংবা ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়লে ভবিষ্যতে বিভিন্ন ধরনের জটিল সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমনকী, অনেক সময় রোগীর শ্রবণশক্তিও কমে যায়, মুখ বেঁকে যেতে পারে, মস্তিষ্কে প্রভাব পড়তে পারে। একই সঙ্গে ঠিকমতো ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ না হলে ফের ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতা রয়েছে।
মনে রাখুন:
অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানের কান পরিষ্কার করেন নিয়ম করে। আর অনেকেই নিজের কান প্রায় রোজই খুঁচিয়ে পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু মানুষের কান পরিষ্কারের কোনো প্রয়োজন নেই। আসলে কথা বলা কিংবা খাবার চিবানোর সময়ে ময়লা আপনাআপনি কান থেকে বেরিয়ে আসে।
কানে বাহ্যিক কোনো বস্তু প্রবেশ করিয়ে খোঁচালে বরং খারাপ। কানের গঠনের কোনো সমস্যা থাকলে তখন ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরিষ্কার করতে হতে পারে। কিন্তু ডাক্তাদের পরামর্শ ছাড়া অন্য কোথাও কান পরিষ্কার করা উচিত নয়।
বাইরে থেকে কানের সমস্যা বোঝা সম্ভব নয়। পাশাপাশি কানের ইনফেকশন প্রাথমিকভাবে বোঝা যায় না। কিন্তু কান ভারী হয়ে যাওয়া, কানে ব্যথা, কানে সাময়িক কম শোনা ইত্যাদি লক্ষণ অনেক সময় ইনফেকশনের কারণ হতে পারে। তাই কান সংক্রান্ত কোনও অস্বস্তি বোধ করলেই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
চিকিৎসা
প্রথমে অটোস্কোপি করে কানের অবস্থা পরীক্ষা করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ মাফিক প্রয়োজন মতো রোগীকে অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ খেতে হয়। অনেকসময় কানের কিছু ড্রপের ব্যবহারেরও পরামর্শ দেওয়া হয়।