অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যাবহারে ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ বিপদ! দাবি বিশেষজ্ঞদের

স্মার্টফোন আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে তুলেছে। এখন আমরা পৃথিবীর অন্য প্রান্তে থাকা যে কারও সঙ্গে কেবল একটি বাটন চেপেই যোগাযোগ করতে পারি। সেকেন্ডের মধ্যে ইন্টারনেট থেকে যেকোনো ধরনের তথ্য পেতে পারি। এতসব সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি আরেকটি বাস্তবতা হলো যে, স্মার্টফোন আমাদের কিছু গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলছে।
একটানা ফোনে স্ক্রলিং করলে তা ঘাড়ে ব্যথা এবং শুষ্ক চোখের কারণ হতে পারে। এর ক্ষতিকর দিক শুধুমাত্র শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। অনলাইনে খুব বেশি তথ্য গ্রহণ করলে তা চাপের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এমনকী আপনি নিজেকে নিরাপত্তাহীন ভাবতে শুরু করতে পারেন। তাই স্মার্টফোন কেন কম ব্যবহার করতে হবে তার পাঁচটি কারণ সম্পর্কে জেনে নিন-

চোখের ক্ষতি করে

আমাদের চোখ বেশ নাজুক। স্মার্টফোন ব্যবহার কমিয়ে না আনলে এর নীল পর্দা সহজেই চোখের ক্ষতি করতে পারে। ফোনের স্ক্রিন ফোটোরিসেপ্টরের ক্ষতি, মাথাব্যথা, অস্পষ্ট দৃষ্টি এবং এমনকি শুষ্ক চোখের জন্য দায়ী হতে পারে। আপনার যদি এমন কোনো উপসর্গ দেখা দেয় তবে হতে পারে সেজন্য ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার দায়ী। তাই চোখদুটিকে বিরতি দিন। আপনার থেকে ২০ মিটার দূরত্বে রাখা কিছুতে ফোকাস করুন এবং চোখের ক্ষতি কমানোর জন্য নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করুন।

কব্জিতে ব্যথা হতে পারে

আপনি যদি দিনে ৫-৬ ঘণ্টা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, তাহলে আপনি ভবিষ্যতে এই অবস্থার শিকার হতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে কার্পাল টানেল এবং কব্জিতে ব্যথা উভয়ই কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সমস্যা। কব্জিতে ব্যথা, অসাড়তা এবং সূঁচ ফোটার অনুভূতির মতো সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি এ ধরনের কোনো উপসর্গ অনুভব করেন, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং ফোন ব্যবহারের সময় কমিয়ে আনুন। পিঠের এবং ঘাড়ের ব্যথার জন্যও দায়ী হতে পারে স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার।

ত্বকের ক্ষয় হতে পারে

কিছু গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, স্মার্টফোন বিভিন্ন ধরণের জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়ার আবাসস্থল। এই জীবাণুগুলো আপনার ত্বকে স্থানান্তরিত হতে পারে। ফলে তা ত্বক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। যখন আপনি ফোনটি আপনার কানের কাছে ধরে রাখেন তখন গালের মাধ্যমে জীবাণুগুলো আপনার ত্বকে স্থানান্তরিত হয়। ফলে ত্বকের দাগ এবং ব্রণ দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে অকাল বার্ধক্যও দেখা দিতে পারে। ঝুঁকি কমাতে অ্যালকোহল ওয়াইপ দিয়ে আপনার ফোন নিয়মিত পরিষ্কার করুন।

ঘুম ব্যাহত করে

স্বাভাবিকভাবে এবং সুস্থ উপায়ে কাজ করার জন্য নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। কিন্তু গভীর রাতে অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে অনেকের ঘুমে সমস্যা দেখা দেয়। হয় তারা তাদের স্মার্টফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে অথবা তারা ঘুমের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। ঘুম অনিয়মিত অনিয়মিত হলে তা আপনাকে খিটখিটে এবং বদমেজাজী করে তোলে। এটি অনেক সময় অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতাও তৈরি করে।

স্ট্রেসের কারণ হতে পারে

স্মার্টফোন আপনাকে দুটি উপায়ে স্ট্রেসের দিকে ঠেলে দিতে পারে। প্রথমত অনিদ্রার কারণে এবং দ্বিতীয়ত ইন্টারনেট থেকে অতিরিক্ত তথ্য গ্রহণের কারণে। আপনি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল বা ইন্টারনেটে স্ক্রল করলে উভয়ই আপনাকে বিভিন্নভাবে অভিভূত করতে পারে এবং কর্টিসলের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। স্মার্টফোনে আসক্তি উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার কারণ হতে পারে।

স্মার্টফোন রেখে সারাদিনের জন্য দূরে থাকা এখন আর কারও পক্ষেই সহজ নয়। তাই স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলতে পারেন-

* খাওয়ার সময় ফোন দেখবেন না।

* সকালে ঘুম থেকে জেগেই ফোন ঘাটতে শুরু করবেন না।

* ঘুমানোর আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করবেন না।

* ঘুমানোর কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা আগে সেলফোন ব্যবহার বন্ধ করুন।