ছেলেবেলায় স্কিপিং বা দড়ি লাফ খেলা খেলেন নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আজকাল কিন্তু সেই দড়ি লাফানো একটি দারুণ ব্যায়াম হিসেবে পরিচিত। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, ওজন কমাতে, শরীরের ঘাম ঝরাতে দড়ি লাফের বিকল্প খুব কম।
আসুন জেনে নিই, দড়ি লাফানোর উপকারিতা সম্পর্কে:
১. এটাকে একটি ভালো কার্ডিও ও হাই ইনটেনসিভ ইন্টারভেল ট্রেইনিং বলা হয়।
২. দেহের চর্বি ঝরাতে এর জুড়ি নেই। দৌড়ানোর চেয়ে স্কিপিং বেশি ক্যালোরি বার্ন করতে সক্ষম। এক ঘন্টা স্কিপিং-এ ১৩০০ ক্যালোরি খরচ হয়।
৩. এটা মাংসপেশিকে টোন করতে সাহায্য করবে।
৪. এই ব্যায়াম হাত-পা একসাথে চালানো ব্যালেন্স করবে, সাথে শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রতঙ্গও মুভমেন্ট হয়। তাই সব অ্যাথলেটরাই স্কিপিং চর্চা করেন।
৫. শরীরের সামাঞ্জস্য রক্ষায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যায়াম।
৬. এতে ফুল বডি ওয়ার্ক আউট হবে। এটি থাই টান টান করতে খুব কার্যকর। এমন কি হাতের মাংসপেশিও ।
৭. হিপের মাংসপেশি টান টান করে।
৮. গবেষণায় দেখা গেছে যে, দৌড়ানোর চেয়ে স্কিপিং জয়েন্টে কম চাপ তৈরি করে। তাই দৌড়ানোর চেয়ে স্কিপিং ভালো ব্যায়াম হিসেবে পরিচিত।
৯. যেহেতু স্কিপিং-এর ফলে হার্ট বিট ফার্স্ট হয় তাই এটি করলে আপনাকে আলাদা করে কার্ডিও ভাস্কুলার এক্সারসাইজ করতে হবে না।
১০. এই এক্সারসাইজ হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে, ফলে এটি অস্টিওপোরোসিস-এর ঝুঁকি কমায়।
১১. বেশিরভাগ সময় বাইরে দৌড়াতে যেতে হবে চিন্তা করে আলসেমি ঘিরে ধরে। তবে হাতের কাছে দড়ি থাকলে আর ঘরের বাইরে যেতে হবে না। তাই খারাপ আবহাওয়া আপনার ফিটনেস রুটিনে আর বাধা নয়। এটা ব্যায়ামের সবচেয়ে সস্তা উপায়। একটি দড়ি হলেই হল।
১২. এই এক্সারসাইজ করতে আপনাকে একেবারে পারদর্শী হতে হবে তা নয়। বিগিনার থেকে অ্যাডভান্স সবাই এটি করতে পারবে।
১৩. স্কিপিং রোপটি হাতের ব্যাগেও রাখতে পারবেন তাই আপনার ব্যায়ামের রুটিন কখনোই মিস হবে না।
স্কিপিং বা দড়ি লাফ করার আগে যা মনে রাখবেন:
১. একটি ভালোমানের রোপ কিনবেন।
২. অনেক বলে যে, খালি পায়ে স্কিপিং ভালো। এতে পায়ের অনেক সমস্যাও ভালো হয়। কিন্তু হঠাৎ করে খালি পায়ে স্কিপিং করলে ব্যথা হতে পারে। তাই স্পোর্টস শু পরে স্কিপিং করাই শ্রেয়।
৩. মেয়েদের জন্য বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের জন্য ভালো মানের স্পোর্টস ব্রা পরে স্কিপিং করা উচিত।
৪. প্রথমে ধীরে ধীরে স্কিপিং করবেন এবং আস্তে আস্তে গতি বাড়াবেন ।
৫. সমান জায়গায় স্কিপিং করবেন। উডেন ফ্লোর হলে ভালো হয়।
৬. এটি একটি হাই ইনটেনসিটি ব্যায়াম তাই ওয়ার্ম আপ খুব জরুরী। প্রথমে ৫ মিনিট অবশ্যই ওয়ার্মআপ করবেন।
৭. স্কিপিং করার জন্য প্রথমে ১৫ মিনিট স্কিপিং করবেন, প্রতি ১০-১৫ সেকেন্ড ইন্টারভেল-এ।
স্কিপিং বা দড়ি লাফ কত প্রকারের হয়?
১. ডাবল জাম্প: সবচেয়ে জনপ্রিয় স্কিপিং স্টাইল, যাতে বেশি গতি চর্চা হয় আর ক্যালোরি বার্নও বেশি হয় ।
২. ক্রস জাম্প: ইনটেনসিভ স্কিপিং স্টাইল, তবে মাঝে মাঝে আপনাকে ব্রেক দিতে হবে।
৩. এক পায়ে লাফানো: এটা অ্যাডভান্স স্কিপিং, তাই ডাবল জাম্প বা ক্রস জাম্প চর্চা করে আয়ত্তে এনে তবে এটি করা উচিত। এতে বেশি ব্যাল্যান্স দরকার হয়।
স্কিপিং কি জরায়ুর ক্ষতি করে?
প্রায় শোনা যায়, স্কিপিং বা দড়ি লাফের ব্যায়াম মেয়েদের করা উচিৎ নয়, কারণ এতে জরায়ু নিচের দিকে নেমে যায়।
জরায়ু নিচে তখনি নেমে যেতে পারে, যখন যেসব লিগামেন্ট জরায়ুকে দেহের ভেতরে ধরে রাখছে সেগুলো অনেক বেশি দুর্বল হয়ে যাবে এবং জরায়ুকে তার জায়গায় আটকে রাখতে পারবে না। সাধারণত এই লিগামেন্টগুলো দুর্বল হতে পারে যে কয়েকটি কারণে, সেগুলো হলো-
১. জরায়ুর আশেপাশের লিগামেন্টে যদি নরমাল প্রেগন্যান্সি বা নরমাল ডেলিভারির সময় ড্যামেজ হয়।
২. নরমাল গ্র্যাভিটি।
৩. বছরের পর বছর খুব হেভি মাসল ড্যামেজ নেয়া।
৪. ইসট্রোজেন হরমোনের অভাব।
মনে হতে পারে, ‘হেভি মাসল ড্যামেজ’ দড়ি লাফের কারণে হয়। কিন্তু আমেরিকান কাউন্সিল অফ এক্সারসাইজের মতে, দড়িলাফ দেহে হালকা জগিং-এর চেয়ে বেশি প্রেসার ফেলে না। এমনকি ফিট নারীরা প্রেগন্যান্সি-এর সময়ও হালকা এক্সারসাইজ হিসেবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দড়িলাফ দিতে পারেন। স্বাভাবিক অবস্থায় এক্ষেত্রে রিস্ক-এর প্রশ্নই আসে না।
ফিটনেস এক্সপার্ট এবং ডাক্তারদের মতানুসারে, দড়িলাফ নিজে থেকে দেহের কোন ক্ষতি নারী-পুরুষ কারো ক্ষেত্রেই করে না।
জরায়ুর ক্ষতি হওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তাররা দড়িলাফের চেয়ে সাধারণ কাজকর্ম, যেমন, ভারী জিনিসপত্র তোলা, নামানো, খুব দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে ওঠা- এসব বিষয়ে বেশি সতর্ক হতে বলেন।