একদিনের বিশ্বকাপে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারের ক্ষত এখনও দগদগে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে। সেই ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ দেওয়ার সুযোগ ছিল মঙ্গলবারই। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য অপেক্ষা বাড়ল। তৃতীয় টি২০ ম্যাচে ভারতকে হারাল অস্ট্রেলিয়া, বলা ভালো ম্যাক্সওয়েলের কাছেই হার মানল ভারত।
ভারতের দেওয়া ২২৩ রানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন দুই অজি ওপেনার ট্রাভিস হেড এবং অ্যারন হার্ডি। বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে যেখান থেকে শুরু করেছিলেন গুয়াহাটিতে তৃতীয় টি২০ ম্যাচে ব্যাট করতে নেমে সেখান থেকে যেন শুরু করলেন হেড। ওপেনিং জুটিতেই উঠে ৪৭ রান।
IND vs AUS 3rd T20I: বর্ষাপাড়ায় ঝড় তুলে শতরান ঋতুরাজের, সিরিজ রক্ষা করতে অজিদের করতে হবে ২২৩ রান
অজিদের প্রথম ধাক্কা দেন অর্শদীপ সিং। ১৬ রান করে পঞ্জাব তনয়ের বলে আউট হলেন হার্ডি। এরপর চেনা মেজাজে ব্যাট করতে থাকেন হেড। কিন্তু অজি তারকাকে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দিলেন না মুকেশের বদলি হিসাবে এই ম্যাচে সুযোগ পাওয়া আভেশ খান।তাঁর বলে ৩৫ রান করে সাজঘরে ফিরলেন বিশ্বকাপ ফাইনালের নায়ক।
এরপরই স্পিনের ভেল্কি দেখাতে শুরু করলেন ভারতীয় স্পিনারা। ১০ রান ইনগ্লিসকে ফেরালেন রবি বিষ্ণোই। স্টইনিসের সঙ্গে জুটি বেধে দলের রানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন ম্যাক্সওয়েল। কিন্তু স্টইনিসকে ১৭ রানে আউট করলেন অক্ষর প্যাটেল। রানের খাতা খোলার আগেই টিম ডেভিডকে সাজঘরের পথ দেখালেন সেই রবি।
কঠিন সময়ে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক ওয়েড। অন্যদিকে চেনা মেজাজে ব্যাট করতে থাকেন ম্যাক্সওয়েল। প্রথমে অর্ধশতরান পূর্ণ করেন ম্যাক্সওয়েল। অধিনায়কের সঙ্গে জুটি গড়ে দলকে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত শতরান করে দলকে জয় এনে দিলেন ম্যাক্সওয়েল। সেইসঙ্গে সিরিজেও টিকিয়ে রাখলেন।
৪৮ বলে ১০৪ রানের দুরন্ত ইনিংস খেললেন। ম্যাক্সওয়েলের ইনিংস সাজানো ছিল ৮টি করে ছয় এবং চার দিয়ে। অধিনায়ক ওয়েডের সঙ্গে ৯১ রানের পার্টনারশিপ গড়লেন। সেই সঙ্গে ৪৭ বলে শতরান করে রেকর্ড গড়লেন। এরআগে জশ ইনগ্লিসের এবং অ্যারন ফিঞ্চের এই রেকর্ড ছিল। অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে টি২০তে দ্রুততম শতরান করার তালিকায় নিজের নাম লেখালেন ম্যাক্সওয়েল। তিনিই ম্যাচের সেরা হলেন। শততম ম্যাচে সেঞ্চুরি করলেন। পাঁচ উইকেটে জয় পেল অজিরা। তিন ম্যাচ পর সিরিজের ফল ২-১।
IND vs AUS 3rd T20I: সতীর্থরা সিরিজ জয়ের লড়াইয়ে সামিল, জীবনের বাইশ গজে নতুন ইনিংসের শুরু মুকেশের
গুয়াহাটির বর্ষাপাড়ার মাঠে টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় অস্ট্রেলিয়া। ভারতীয় দলের ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল ব্যাট হাতে সাফল্য পাননি, এমনকি তিন নম্বরে নেমে ০ রানেই আউট হন ঈশান কিষাণও।
অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব শুরু থেকেই বর্ষাপাড়ার মাঠে ঝড় তোলার চেষ্টা করেন কিন্তু সূর্যের তেজ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ২৯ বলে ৩৯ রান করেই সাজঘরে ফেরেন ভারত অধিনায়ক। তাঁর ইনিংস সাজানো ছিল পাঁচটি চার এবং দুটি ছক্কা দিয়ে।
৫৭ বলে ১২৩ রানে অপরাজিত থাকলেন ঋতুরাজ। তাঁর ইনিংস সাজানো ছিল ১৩টি চার এবং ৭টি ছক্কা দিয়ে তাঁর টি২০-তে এরআগে সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ৫৮। প্রথম শতরান পেলেন টি২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচে। মিডল অর্ডারে নেমে তিলক ভার্মা ৩১ রানে অপরাজিত থাকলেন তিলক। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ২২২ রান তোলে ভারত।
তবে ভারতীয় বোলাররা এই ম্যাচে বেশ হতাশই করলেন। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ থেকে আভেশ খান বিশেষ করে পেসাররা নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারলেন না। ৪ ওভারে ৬৮ রান দিয়েছেন কৃষ্ণ। ভারতীয় বোলার হিসাবে সর্বাধিক রান খরচ করার লজ্জার রেকর্ডও গড়লেন টি২০ ম্যাচে।
ম্যাচ শেষে ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব বলেন, ‘ইনিংসের বিরতিতে সতীর্থদের বলেছিলাম দ্রুত ম্যাক্সওয়েলকে আউট করতে হবে। কিন্তু সেটা হল না। এরআগে তিরুবন্তপুরমে শিশিরের মধ্যেও বোলাররা এই রান নিয়েই ম্যাচ জিতিয়েছিলেন।’
অন্যদিকে শতরানকারী ম্যাক্সওয়েল বলেন, ‘এটা খুব দ্রুতই হয়েছে। আমরা জানতাম ইর্য়কার খেলা কঠিন হবে। কিন্তু উইকেটে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারলে আমরা জানতাম লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। আমি মূলত পেস বোলারদের বেছে নিয়েছিলাম।উইকেটের অপর প্রান্ত যেভাবে ওয়েড সামলেছে তা একা কথায় দুরন্ত।’ আগামী ১ ডিসেম্বর রায়পুরে চতুর্থ টি২০ ম্যাচ।