প্রকৃতিতে পাওয়া পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে দুধ অন্যতম। কিন্তু অনেকেরই আবার দুধ পানে পেটের সমস্যা হয়ে থাকে। আপনার যদি দুধ পানে পেটের সমস্যা হয় কিংবা অন্য কোনো কারণে দুধ পান করতে অপারগ হন তাহলে এর বিকল্প ভাবতে পারেন। এ লেখায় তুলে ধরা হলো দুধের তেমন বিকল্পের কথা। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে এনডিটিভি।
শিশুর জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নেই। শিশুর বয়স ছয় মাস না হওয়া পর্যন্ত তাকে সম্পূর্ণ মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। এছাড়া তিন বছর বয়স পর্যন্ত তাকে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে মায়ের দুধ দেওয়া উচিত।
কেন দুধের বিকল্প?
গরু কিংবা ছাগল বা এ ধরনের কোনো প্রাণীর দুধে অনেকেরই নানা স্বাস্থ্যগত সমস্যা হয়ে থাকে। এসব সমস্যার মধ্যে রয়েছে অ্যালার্জি ও পেটের সমস্যা। তবে দুধের বিকল্প নানা উপাদান এ সমস্যা থেকে দূরে রাখে।
এ বিষয়ে ভারতীয় চিকিৎসক সাক্ষী হারি খান্না বলেন, ‘৭০ শতাংশ ভারতীয়ের রয়েছে দুধের প্রতি অ্যালার্জি। দুধ খাওয়ার ফলে আপনার ত্বক সমস্যা, চুলকানি ও এ ধরনের এমন সব সমস্যা হতে পারে যা আপনি হয়ত অনুধাবন করতে পারেন না। ব্রুকোলিতে রয়েছে দুধের তুলনায় বেশি ক্যালসিয়াম। সয়াতে রয়েছে দুধের তুলনায় বেশি প্রোটিন। এ কারণে আপনার শুধু যে দুধের ওপর নির্ভর করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই।’
বর্তমানে নানা স্থান থেকে দুধে ভেজাল দেওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ ভেজাল দুধ স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। এ কারণে অনেকেই দুধের বদলে বিকল্প খাবারের কথা ভাবছেন।
গরুর দুধের দাম এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি। আর এ কারণে খামারিরা গরুকে নানা ধরনের ওষুধ ও হরমোন প্রয়োগ করে দুধের উৎপাদন বাড়িয়ে নিচ্ছেন। আর এতে দুধের পুষ্টিগুণ কমে যাচ্ছে। এছাড়া রয়েছে গরুকে বাড়তি ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানোর প্রভাব। এসবের কারণে গরুর দুধে হরমোনও বেড়ে যাচ্ছে, যা মানুষের দেহে নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।
দুধের বিকল্প: দুধ পানের নানা স্বাস্থ্যগত সমস্যায় আপনি যদি পড়েন তাহলে তার বিকল্প কী নেওয়া যায়?
দুধ পানে যাদের সমস্যা হয় তারা সহজেই বিকল্প হিসেবে দই খেতে পারেন। এটি যথেষ্ট পুষ্টিকর।
এ বিষয়ে ডাক্তার রুপালি দত্ত বলেন, দুধ পরিপূর্ণ পুষ্টি দেয়। তবে বিভিন্ন কারণে আপনার দুধ পানে সমস্যা হতে পারে। আর এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমার পরামর্শ হলো সেরিয়াল গ্রহণ করতে। দই হতে পারে একটি ভালো বিকল্প। এটি তুলসি পাতার সঙ্গে খেতে হবে। এতে তা সহজেই হজম হবে।
অ্যামন্ড বা কাঠবাদাম দুধ: অ্যামন্ড বা কাঠবাদাম দিয়ে দুধ বানানো যায়। এটি অ্যামন্ড চূর্ণ ও জলের সংমিশ্রণ। এটি যথেষ্ট মজাদারও বটে। এতে আলকালাইন রয়েছে। এটি পেটে সহজেই হজম হয়। তবে এতে দুধের মতো প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম নেই। তবে তা পূরণ করার জন্যও উপায় রয়েছে। সেক্ষেত্রে কলা, খেজুর ইত্যাদি প্রয়োগ করা যেতে পারে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিন শুরু করার জন্য এক গ্লাস অ্যামন্ড দুধ হতে পারে আদর্শ। এতে বেশি ক্যালরি ও কোলস্টেরল নেই। এটি হতে পারে জুসের একটি ভালো বিকল্প। দৈনিক এক গ্লাস দুধের বদলে পান করা যেতে পারে এক গ্লাস অ্যামন্ড দুধ।এক্ষেত্রে অ্যামন্ড দুধ গরুর দুধের মতো পুষ্টিকর না হলেও তা পুষ্টিকর কিছু উপাদান মিশিয়ে গরুর দুধের মতোই পুষ্টিকর করা সম্ভব।
সয়া দুধ: সয়াবিন থেকে শুধু সয়াবিন তেলই তৈরি হয়না, দুধও তৈরি করা যায়। এই দুধ গরুর দুধের মতোই দেখতে। এছাড়া এর স্বাদ ও গন্ধ অনেকটাই গরুর দুধের কাছাকাছি। সয়াবিন থেকে তৈরিকৃত এই দুধের নাম সয়া দুধ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সয়া দুধে গরুর দুধের চেয়ে আমিষের পরিমাণ যথেষ্ট বেশি। এতে লেসিথিন নামে এক প্রকার উপাদান আছে যা স্মরণ শক্তি বাড়াতে কাজ করে।
প্রতি ১০০ গ্রাম সয়াবিনে পুষ্টি উপাদানের মধ্যে আছে ৪৩ গ্রাম আমিষ। এছাড়া এতে আছে শরীরে শক্তি উৎপাদনকারী চর্বি, দাঁত ও হাড় গঠন এবং হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধকারী ক্যালসিয়াম, রক্তশূন্যতা,ও শরীরের দুর্বলতা প্রতিরোধকারী লৌহ, রাতকানা ও চক্ষুরোগ প্রতিরোধক ভিটামিন ‘এ’।
সয়া দুধ পশ্চিমা দেশগুলোতে যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দুধের বিকল্প হিসেবে এটিও যথেষ্ট সম্ভাবনাময়।