কিডনিতে পাথর হলে একাধিক সমস্যায় পড়েন আক্রান্ত রোগী। এক্ষেত্রে ব্যথাই হল প্রথম ও প্রধান সমস্যা। এই অসুখে আক্রান্ত রোগীর এতটাই ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা থাকে যে সাধারণ পেইনকিলার একদমই কাজ করতে পারে না। তখন ইঞ্জেকশনের মাধ্যমেই হাই ডোজ পেইনকিলার দিতে হয়। তাই বিশেষজ্ঞরা বারবার এই অসুখ প্রতিরোধের পরামর্শ দেন।
তবে মুশকিল হল, আমাদের জীবনযাত্রার কিছু ভুলত্রুটিই এই অসুখকে ডেকে আনে। তাই শেষ কয়েক দশকে এই অসুখে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে একটি কিডনিতে বা দুটি কিডনিতে একসঙ্গে স্টোন হতে পারে। স্টোনের আকারও হতে পারে বিভিন্ন রকম। এছাড়া এই সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর পিঠে ব্যথা, তলপেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, প্রস্রাব করার সময় তীব্র জ্বালা, প্রস্রাবে রক্ত বেরনো সহ একাধিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে।এখন প্রশ্ন হল, কী ভাবে এই সমস্যার ফাঁদ থেকে নিজেকে বাঁচানো সম্ভব? সেই কৌশল জানতে আপনাকে প্রতিবেদনটি যে পড়তেই হবে।
১. পর্যাপ্ত জলপানেই কিডনি স্টোনকে হেলায় হারান
অনেকেই খুব কম পরিমাণে জলপান করেন। আর এর প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়ে কিডনির উপর। আসলে কম পরিমাণে জলপান করলে কিডনিতে খনিজ পদার্থ জমা হওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। এই কারণেই কিডনিতে তৈরি হয় স্টোন। তাই সাবধান হতেই হবে। এক্ষেত্রে দিনে ৩ লিটার জলপান করা আবশ্যক। কমপক্ষে এই পরিমাণ জলপান করতে পারলেই কিডনি স্টোনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। তাই সাবধান হন।
২. ক্যালশিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়া বাড়ান
হেলথলাইন জানাচ্ছে, সাধারণত বেশিরভাগ কিডনি স্টোনের পিছনে কলকাঠি নাড়ে ক্যালশিয়াম অক্সালেট। আর এই তথ্য জানার পরই অধিকাংশ মানুষ ক্যালশিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়া কমিয়ে দেন। যদিও ক্যালশিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়া কমানোর তুলনায় বাড়িয়ে দিলেই এক্ষেত্রে লাভ বেশি। কমে কিডনি স্টোনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ক্যালশিয়াম সাপ্লিমেন্ট খেলে কিন্তু সমস্যার শেষ থাকবে না। তাই ক্যালশিয়াম সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ফেলুন।
৩. নুন খাওয়া কমালেই খেলা ঘুরবে
অনেকেরই ভাতের পাতে নুন না খেলে চলে না। মনটা যেন কেমন কেমন করে। তবে জানলে অবাক হয়ে যাবেন, আপনার এহেন বদভ্যাসই কিন্তু একাধিক জটিলতা বাড়াতে পারে। এমনকী কিডনি স্টোনের কারণও হাতে পারে অত্যধিক নুন প্রীতি। আসলে শরীরে অত্যধিক পরিমাণে সোডিয়াম থাকলে তা ক্যালশিয়াম শোষণে বাধা দেয়। অগত্যা কিডনিতে গিয়েই জমতে থাকে ক্যালশিয়াম। আর এই কারণেই ধীরে ধীরে তৈরি হয় স্টোন। তাই আজ থেকই নুন খাওয়া কমান।
৪. অক্সালেট যুক্ত খাবারেই লুকিয়ে বিপদ
সাধারণত কিডনি স্টোনের পিছনে থাকে অক্সালেট জাতীয় খাবার। তাই যত দ্রুত সম্ভব নিম্নোক্ত এই কয়েকটি খাবার কম পরিমাণে খান-
১. পালংশাক
২. চকোলেট
৩. কফি
৪. মিষ্টি আলু
৫. বাদাম
৬. সোয়াবিন ইত্যাদি।
তবে এই সকল খাবার একবারে ছেড়ে দেওয়ার ভুল করবেন না। বরং কম পরিমাণে খান। নইলে যে পুষ্টির ঘাটতি হতে পারে!
৫. প্রাণিজ প্রোটিনেও লুকিয়ে সমস্যার বীজ
চিকেন বা রেডমিটের মতো মাংসে রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত পিউরিন। আর এই পিউরিন কিন্তু দেহে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়াতে পারে। আর সেই ইউরিক অ্যাসিড কিডনিতে স্টোন হিসাবে জমা হয়। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই ধরনের প্রাণিজ প্রোটিনে রাশ টানুন। আশা করছি অনায়াসে কিডনি স্টোনের মতো সমস্যাকে প্রতিহত করে নিশ্চিন্তে কাটাতে পারবেন জীবন।