কোন কোন লক্ষণ দেখে বুঝবেন আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে? শিখেনিন তার কৌশল

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্ষমতা কমে গেলে বিভিন্ন ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। শীতে এমনিতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে। তাই এ সময় ইমিউন সিস্টেম ভালো রাখতে জীবনযাপনে পরিবর্তন আনা জরুরি।

তবে কীভাবে বুঝবেন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে? সেক্ষেত্রে প্রকাশ পায় বেশ কিছু লক্ষণ। অ্যালার্জি, হাঁপানি বা একজিমা থেকে শুরু করে বাত, টাইপ ১ ডায়াবেটিসের মতো রোগসমূহ অটোইমিউন ডিসঅর্ডারের কারণে হতে পারে।

ইমিউনিটি কমে গেলে কমপক্ষে ৮০টি সমস্যা দেখা দেয় শরীরে। এসব সমস্যাগুলো শারীরিক প্রদাহ সৃষ্টি করে। জেনে নিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করেছে বুঝবেন যেসব লক্ষণে-

শরীর ঠান্ডা থাকা

যখন শরীরের রক্তনালি ফুলে যায়, তখন হাত-পায়ের আঙুল, কান ও নাক ঠান্ডা থাকে। এসব স্থান সাদা ও পরবর্তী সময়ে নীলচে হয়ে ওঠে। চিকিৎসকদের মতে, এটি ‘রায়নাউডস ফিনমিনান’। ইমিউন সিস্টেমের সমস্যা কারণে এমনটি ঘটে।

ডায়রিয়া

২-৪ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ডায়রিয়া হলে বিষয়টি নিয়ে হেলাফেলা করা ঠিক নয়। এটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কমে যাওয়ার একটি সতর্কতা লক্ষণ হতে পারে।

পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যও উদ্বেগের বিষয়। এছাড়া শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করলে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসজনিত সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

শুষ্ক চোখ

অটোইমিউন ডিসঅর্ডার থাকা বেশিরভাগ ব্যক্তিরাই শুকনো চোখের সমস্যায় ভোগেন। এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কমতে শুরু করলে চোখ ব্যথা, লালচেভাব, চোখ দিয়ে পানি পড়া, ঝাপসা দৃষ্টি ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।

ক্লান্তি

ভাইরাল ফ্লুতে আক্রান্ত হলে শরীর যেমন ক্লান্ত অনুভব করে, ঠিক তেমনই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কমলেও এই লক্ষণ দেখা দেয়। পাশাপাশি জয়েন্ট ও পেশীতে ব্যথা হতে পারে। ঠান্ডা ও ক্লান্তির পাশাপাশি হালকা জ্বরও থাকতে পারে শরীরে।

মাথাব্যথা

মাথাব্যথা আরও একটি লক্ষণ। এটি ভাস্কুলাইটিস হতে পারে, যা সংক্রমণ বা অটোইমিউন রোগ দ্বারা সৃষ্ট রক্তনালিতে প্রদাহের কারণে হয়ে থাকে।

ত্বকে ফুসকুড়ি

ত্বকই প্রথম জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করলে ত্বকের বিভিন্ন স্থানে ফুসকুড়ি বের হতে পারে।

চুলকানি, শুকনো, লাল ত্বক প্রদাহের একটি সাধারণ লক্ষণ। অনেকেরই নাক এবং গাল জুড়ে প্রজাপতির আকারের ফুসকুড়ি সৃষ্টি হয়।

জয়েন্টে ব্যথা

শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা থাকতে পারে। জয়েন্টগুলোর অভ্যন্তরের আস্তরণ যখন ফুলে ওঠে; তখন চারপাশের অঞ্চলে ঘর্ষণের ফলে জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে। বিশেষ করে সকালে জয়েন্টের ব্যথা তীব্র হয়ে থাকে।

চুল ওঠা

হঠাৎ করে যদি মুঠো মুঠো চুল উঠতে থাকে, তা হতে পারে চিন্তার বিষয়। এই অবস্থাকে বলা হয় অ্যালোপেসিয়া আরাটা। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কমতে শুরু করলে অত্যাধিক চুল পড়ে থাকে।

সাইনাস ও কানের সংক্রমণে

আরও একটি লক্ষণ হলো দীর্ঘস্থায়ী সাইনাস ইনফেকশন, এক বছরে ৪ বারের বেশি কানে সংক্রমণসহ একাধিকবার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

রোদে অ্যালার্জি

অটোইমিউন ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে সূর্যের তাপে ফোটোডার্মাটাইটিস নামক অ্যালার্জির সৃষ্টি হয়। ফলে রোদে থাকার পর শরীরে ফোসকা, ফুসকুড়ি বা কালচে দাগ পড়ে থাকে। পাশাপাশি ঠান্ডা লাগা, মাথা ব্যথা বা বমিভাব হতে পারে।

হাত-পা অবশ বোধ করা

মাঝে মাঝে হাত-পা অবশ হয়ে আসতে পারে। এটিও অটোইমিউন ডিসঅর্ডারের লক্ষণ। যাদের গিলেন- বারে সিন্ড্রোম আছে; তাদের পায়ে অসাড়তা থাকতে পারে, যা তাদের হাত এবং বুকের দিকে চলে যায়।

খাবার গিলতে সমস্যা

খাবার গিলতে সমস্যা হতে পারে। কিছু লোকের মনে হয় যে, খাবারটি তাদের গলা বা বুকে আটকে আছে। পাশাপাশি খাবার গিলতে গেলে দম বন্ধ হয়ে আসা বা ব্যথা অনুভব করা, হতে পারে ইমিউন সিস্টেমের সমস্যার লক্ষণ।

ওজন বেড়ে বা কমে যাওয়া

হঠাৎ ওজনে পরিবর্তন আসতে পারে। হুট করে ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যেতে পারে অটোইমিউন ডিসঅর্ডারে। অটোইমিউন রোগ থেকে আপনার থাইরয়েড গ্রন্থির ক্ষতি হওয়ার কারণে ওজনে পরিবর্তন ঘটে।

শ্বেতী রোগ

ত্বকের বিভিন্ন স্থান সাদা হয়ে যাওয়া বা শ্বেতী রোগ হতে পারে অটোইমিউন ডিসঅর্ডারের কারণে। যাকে মেলানোসাইট বলে। এমন লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিতিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে।

ত্বক বা চোখ হলুদ হওয়া

জন্ডিসের মতো ত্বক বা চোখ হলুদ হওয়ার লক্ষণও প্রকাশ পায় অটোইমিউন ডিসঅর্ডার হলে। এর অর্থ হতে পারে, আপনার প্রতিরোধ ব্যবস্থা কম থাকায় লিভারের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

একে বলা হয় অটোইমিউন হেপাটাইটিস। এসব লক্ষণ হতে পারে শরীরের রোগ প্রতিরোধ কমার সংকেত। তাই এড়িয়ে না গিয়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।