আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। তাইতো দুই বেলা পাতে ভাত না হলে আমাদের চলেই না। ভাতের কথা মনে হলেই চোখে ভেসে ওঠে ঝরঝরে সাদা দানা। কিন্তু আমরা একটি ভুল ধারণা নিয়ে আছি। আসলে ভাতের রং সাদা হয় না, এটি প্রসেস করে সাদা করা হয়।
চালের রং হয় লালচে বা ব্রাউন। চালের লাল অংশ হলো এর আবরণ। আর এই আবরণে থাকে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ উপাদান ও খনিজ। প্রসেস করে সাদা করার সময় এই প্রয়োজনীয় আবরণ ছেটে বাদ দেয়া হয়। যে কারণে সাদা ভাত খেয়ে পেট ভরলেও এতে থাকে না পুষ্টিগুণ। তাইতো সাদা ভাতের বদলে লাল চালের ভাত খেলে বেশি উপকার মিলবে।
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, সাদা ভাতে কি আসলেই কোনো উপকারিতা নেই, সব উপকারিতা কেবল লাল চালে? এ নিয়ে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরাও। সেখান থেকে মিলেছে চমকপ্রদ সব তথ্য।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, লাল চালে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। সেইসঙ্গে হজমশক্তি উন্নত করে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতেও এটি সমান উপকারী। তাই সাদা ভাত নয়, লাল চালের ভাত খেলেই মিলবে উপকার। চলুন এবার জেনে নেয়া যাক লাল চালের ভাতের আরও কিছু উপকারিতা সম্পর্কে-
ওজন কমায়
বাড়তি ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগলে আপনাকে নিয়মিত লাল চালের ভাত খেতে হবে। কারণ এই উপকারী ভাত খেলে তা শরীরে নানা জায়গায় জমে থাকা চর্বি ঝরাতে সাহায্য করে, পাশাপাশি শরীরে বাড়ায় ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএল এর মাত্রা। এতে কমে ওজন, দূরে থাকে হৃদযন্ত্রের অসুখ।
হজম ক্ষমতা বাড়ায়
নিয়মিত লাল চালের ভাত খেলে তা আমাদের শরীরে ফাইবারের ঘাটতি দূর করতে সাহায্য করে। এটি হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, পাশাপাশি দূরে রাখে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো অসুখও। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে নিয়মিত লাল চালের ভাত খান। এতে উপকার মিলবে।
ডায়াবেটিস দূরে রাখে
বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে, লাল চালে থাকা ফাইবার, পলিফেনল এবং পাইটিক অ্যাসিড আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এতে আরও আছে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট, যা রক্তে শর্করার পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়াতে পারে। তাই লাল চালের ভাত খেলে হঠাৎ করে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ভয় থাকে না। কিন্তু সাদা ভাত খেলে এর উল্টোটা ঘটে। তাই ডায়াবেটিসের রোগীকে সাদা ভাত খেতে নিষেধ করেন বিশেষজ্ঞরা।
ক্যান্সারের আশঙ্কা কমায়
বিশ্বে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এই মরণঘাতী রোগ থেকে দূরে থাকতে চাইলে নিয়মিত লাল চালের ভাত খান। এই ভাতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সার থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে কোলন ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের আশঙ্কা কমায় এই চালের ভাত। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, লাল চালের ভাত খেলে তা লিউকেমিয়ার মতো ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘাটতি কমায়
লাল চালে আছে পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি রক্তে থাকা ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এর ফলে দূরে থাকা যায় বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে। নিয়মিত লাল চালের ভাত খেলে তা শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়। তাই সহজেই শরীরের ক্ষয় রোধ হয়, দূরে থাকে নানা অসুখও।