বর্তমানে স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনিয়মিত জীবনধারণসহ উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল স্ট্রোকের ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়।
যদি স্ট্রোকের আগে শরীরে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়, তবে বেশিরভাগ মানুষই তা অবহেলা করেন। ফলে স্ট্রোকে আক্রান্তদের অনেকেই মৃত্যুবরণ করেন আর না হয় পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তাই স্ট্রোকের বিষয়ে সবারই আরও সচেতনতা জরুরি।
সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে, রক্তের গ্রুপ অনুযায়ীও নাকি জানা যায় কারও স্ট্রোকের ঝুঁকি আছে কি না। মার্কিন গবেষকরা জেনেটিক্স ও ইস্কেমিক স্ট্রোক সম্পর্কে কয়েক ডজন গবেষণা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে।
তারা দেখেছেন, যাদের রক্তের গ্রুপ ‘এ’, তাদের ৬০ বছর বয়সের আগে অন্য সবার তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এছাড়া লিঙ্গ, ওজন ও ধূমপানের কারণেও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
অন্যদিবে ‘বি’ রক্তের গ্রুপের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি কিছুটা বেশি। তবে ‘ও’ গ্রুপের মধ্যে যাদের জন্য ঝুঁকি কম ছিল। গবেষকরা বলছেন, একজন ব্যক্তির রক্তের টাইপ তার প্রাথমিক স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকির সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
ইস্কেমিক স্ট্রোক তখনই ঘটে যখন মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধায় অক্সিজেন চলাচল করতে পারেন না। ১০টি স্ট্রোকের ঘটনার মধ্যে প্রায় ৯টিই এ কারণে ঘটে। ধমনীগুলো সরু হয়ে গেলে বা খারাপ কোলেস্টেরল জমে প্লাকের সৃ্ষ্টি হলে রক্ত চলারচল বন্ধ হয়ে স্ট্রোকের ঘটনা ঘটে।
ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের গবেষণায় একটি দল ৪৮টি বিভিন্ন গবেষণা থেকে ৭ হাজার স্ট্রোক রোগী ও প্রায় ৬ লাখ সুস্থ মানুষের ডেটা বিশ্লেষণ করেন।
তারা দেখেন, ৬০ বছরের আগে ‘ও’ গ্রুপের ব্যক্তিদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি ১২ শতাংশ কম। অন্যদিকে ‘বি’ ও ‘এবি’ গ্রুপের মধ্যে ১২ শতাংশ বেশি।
নিউরোলজি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় আরও দেখা গেছে, এ ব্লাড গ্রুপের ১৬ জনের মধ্যে একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন।
নিউরোলজির অধ্যাপক ও গবেষণার সহ-প্রধান তদন্তকারী ডা. স্টিভেন কিটনার বলেছেন, ‘প্রাথমিক স্ট্রোকযুক্ত লোকের সংখ্যা বাড়ছে। এদের মধ্যিই বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। আর বেঁচে থাকা ব্যক্তিরা কয়েক দশক ধরে অক্ষমতার মুখোমুখি হয়ে মৃত্যুবরণ করছেন।’
তিনি আরও যোগ করে বলেন, ‘আমরা এখনো জানি না কেন ‘এ’ রক্তের গ্রুপের মধ্যে কেন স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি, তবে এটি সম্ভবত রক্ত জমাট বাঁধার কারণগুলোর সঙ্গে কিছু সম্পর্কযুক্ত।
চ্যারিটি স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণা, যোগাযোগ ও এনগেজমেন্ট লিড ডা. ক্লেয়ার জোনাস বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক গবেষণাটি স্ট্রোকের জন্য জেনেটিক ঝুঁকির কারণ সম্পর্কে জানালেও, ঠিক কী কারণে এ গ্রুপের মধ্যে প্রাথমিক স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি হতে পারে তার কারণ জানা যায়নি। এমনকি আমরা এখনো প্রাথমিক স্ট্রোকের জন্য লক্ষ্যযুক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারিনি।’
‘তবে প্রত্যেকেরই স্ট্রোকের ঝুঁকি নিরীক্ষণ ও পরিচালনার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সবচেয়ে বড় যে কাজটি করতে পারেন তা হলো, রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ করা ও সক্রিয় জীবনযাপন করা।