বর্তমানে হৃদরোগে আক্রান্তের রোগী বাড়ছে। এদের মধ্যে অনেকেই হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণও করছেন। হার্ট অ্যাটাক শুধু বয়স্কদের মধ্যেই ঘটে, এখন আর এটি সঠিক নয়। কমবয়সীদের মধ্যেও অনেক সুস্থ ও ফিট মানুষও সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকে হঠাৎ করেই মারা যাচ্ছেন।
কয়েক বছর আগেও অনেকের ধারণা ছিল, শারীরিকভাবে ফিট ও নিয়মিত ব্যায়াম করলে হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। তবে বর্তমানে এই ধারণা অস্পষ্ট বলে মনে হচ্ছে।
সম্প্রতি যেসব সেলিব্রিটিদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাতের ঘটনা ঘটেছে, তাদের বেশিরভাগই ফিট, সুস্থ ও নিয়মিত কাজে সরব থাকার পরও এমনটি ঘটেছে। প্রয়াত জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কেকে’র ঘটনা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। মঞ্চে গান গাওয়ার সময় তিনি হার্ট অ্যাটাক করেন।
তাহলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি নির্ণয় করার উপায় আছে কি? বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি রক্ত পরীক্ষা আছে যা একজনের হার্টের সমস্যার আগাম ইঙ্গিত দিতে পারে। যার নাম কার্ডিও-সি প্রতিক্রিয়াশীল প্রোটিন (এইচএস সিআরপি)।
কার্ডিও সি-রিঅ্যাকটিভ (এইচএস সিআরপি) প্রোটিন পরীক্ষা কি?
কার্ডিও সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন যা উচ্চ সংবেদনশীল সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন (এইচএস সিআরপি) নামেও পরিচিত। এটি একটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষা।
ভারতের ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউটের ভিজিটিং কনসালটেন্ট, সিনিয়র কনসালট্যান্ট কার্ডিও-থোরাসিক অ্যান্ড ভাস্কুলার সার্জন (প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুরোগ) ডা. বিক্রম কেশরী মোহান্তির মতে, শরীরের কোথাও কোনো সংক্রমণ হলে সিআরপি বা স্ট্যান্ডার্ড সিআরপি ওই প্রদাহ চিহ্নিত করে।
রক্তে সিআরপি’র স্তর যদি বেড়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে হার্টের ধমনীতে ব্লকেজ, হার্ট অ্যাটাক, হঠাৎ হার্ট অ্যারেস্ট, স্ট্রোক বা অস্ত্রের ধমনীতে ব্লকেজ হওয়ার ঝুঁকি আছে।
আরেক চিকিৎসক ভারতের ফরিদাবাদের অমৃতা হাসপাতালের প্রফেসর ও এইচওডি, কার্ডিওলজিস্ট ডা. বিবেক চতুর্বেদী জানান, কার্ডিও সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন বা এইচএসসিআরপি একটি পরীক্ষা যা সম্প্রতি প্রাধান্য পেয়েছে।
এটি নিম্ন স্তরের বা দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের চিহ্নিতকারী। যেমন- বিভিন্ন সংক্রমণ, স্ট্রেস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ইত্যাদির মতো কিছু অটো-ইমিউন রোগের বিরুদ্ধে আমাদের শরীরের প্রতিক্রিয়া।
যখন আমরা পোকামাকড়ের কামড়ের পরে আমাদের ত্বকে লাল দাগ দেখতে পাই, এটি প্রদাহের কারণে হয়। প্রদাহ স্বল্প মেয়াদে উপযুক্ত, তবে দীর্ঘ সময়ের জন্য উপস্থিত থাকলে তা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
হার্টে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের একটি নিম্ন স্তরের সঙ্গে হার্ট অ্যাটাক, আকস্মিক মৃত্যু ও এনজিওপ্লাস্টি বা বাইপাস ইত্যাদির ঝুঁকির সঙ্গে যুক্ত।
তিনি আরও বলেন, ‘কার্ডিও সি রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন বা এইচএসসিআরপি হলো জিগস পাজলের একটি অংশ যা হার্টের স্বাস্থ্য। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ মাত্রার এইচএসসিআরপি অন্যান্য হৃদরোগের ঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়।’
তবে এটি মনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যে কোনো সাম্প্রতিক সংক্রমণে সিআরপি ও এইচএসসিআরপি কয়েক সপ্তাহের জন্য উন্নত হতে পারে। এর মানে এই নয় যে আপনি হার্ট অ্যাটাক করতে যাচ্ছেন!
যদি একজন সুস্থ মানুষের এইচসিপিআর বেশি হয়, তখন দুবার পরীক্ষা করা উচিত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে। তাহলে নিশ্চিত করা যেতে পারে যে ব্যক্তির হৃদরোগের ঝুঁকি আছে কি না।
যদি বারবারই এইচসিপিআর সংখ্যা বাড়ে তাহলে তা ইঙ্গিত দেয় এখন সুস্থ থাকলেও ভবিষ্যতে ওই ব্যক্তির ধমনীতে বাধা, হার্ট অ্যাটাক, হঠাৎ হার্ট অ্যারেস্ট, স্ট্রোক ও পেরিফেরাল ধমনী রোগের মতো হৃদরোগের ঝুঁকি আছে।
এ কারণে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের নিয়মিত বার্ষিক হার্ট চেকআপ করানো উচিত। যার মধ্যে প্রতিটি সিস্টেমের জন্য রক্ত পরীক্ষা (কিডনি, লিভার, চিনি ও কোলেস্টেরল), বুকের এক্স-রে, ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাফি ও প্রয়োজনে ট্রেডমিল পরীক্ষাও করা উচিত।
আর অবশ্যই ৩০ বছর থেকেই সবার উচিত নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা, ওজন পরিমাপ, শর্করা ও কোলেস্টেরল পরিমাপ করা। এর পাশাপাশি হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে জীবনধারায় পরিবর্তন, নিয়মিত শরীরচর্চা ও ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।