হঠাৎ করেই ওজন বেড়ে যাচ্ছে, অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। সাম্প্রতিক কালে সময়ে এ সমস্যাগুলোতে বেশিরভাগ মানুষ ভুগছেন। একবার ও খতিয়ে দেখেছেন কি? শরীরে টক্সিন এর আধিক্য এর কারণ।
টক্সিন শব্দটি অনেকেই শুনেছেন। কিন্তু এর ভয়াবহতা এবং এর সৃষ্টির পিছনের কারণ সম্পর্কে জানেন খুব কম সংখ্যক মানুষ।
টক্সিন কী?
এটি হচ্ছে এক ধরণের জৈব বিষ। মানবদেহে প্রতি মুহূর্তে টক্সিন তৈরি হয়। শরীর থেকে টক্সিন বের হতে না পারলে তা আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষকে আক্রমণ করে বসে যা পরবর্তীতে বিভিন্ন জটিল রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। টক্সিন সাধারণত দূষিত জল, অপরিচ্ছন্নতা, বাসি খাবার, দূষিত বায়ু ইত্যাদির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে থাকে।
শরীরে টক্সিনের আধিক্য কিভাবে বুঝবেন?
শরীরে অত্যধিক টক্সিন জমা হলে তা শরীর নিজেই তা জানান দেয়। কিছু শারীরিক লক্ষণ রয়েছে যা দেখলে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন আপনার শরীরে টক্সিনের আধিক্য রয়েছে।
কোষ্ঠকাঠিন্য
লারজ ইন্টেস্টাইন প্রত্যহ মলের সঙ্গে শরীরের টক্সিন বের করে দেয়। নিয়মিত মল ত্যাগ না হলে শরীরে টক্সিন জমে এবং ফলস্বরুপ কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
ওজন বেড়ে যায়
কিছুই খাচ্ছেন না অথচ ওজন বেড়ে যাচ্ছে অথবা হঠাৎ করেই ওজনটা বেড়ে গেল এমনটা অনেকের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। আবার অনেক চেষ্টা করেও ওজন কমাতে পারছেন না। এমন ক্ষেত্রে বুঝবেন শরীরে টক্সিন জমেছে। সাধারণত চিনি বেশি খেলে, রাসায়নিক খাবার, ক্যানবন্দি খাবার, জাংক ফুড বেশি খেলে এক সময় এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় ।
একটুতেই ক্লান্ত
শরীরে টক্সিনের আধিক্যে একটুতে ক্লান্তি ভর করে। রোজকার সাধারণ কাজ করতেই হাপিয়ে উঠছেন, অফিস থেকে ফিরে বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছে না বা শুয়ে থাকলেই যেন ভালো লাগে। এমন হলে বুঝবেন টক্সিনের মাত্রা বেড়ে গেছে। টক্সিন শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় বলেই এমনটি হয়।
চর্ম রোগ
চামড়া বা ত্বক আমাদের দেহ থেকে টক্সিন বের করে দিতে সহায়তা করে। অন্ত্র এবং লিভার যখন খাবারে থাকা টক্সিন বের করে দিতে পারে না, তখনই ত্বক সেই টক্সিন বের করার চেষ্টা করে এর ফলেই ফোঁড়া, র্যাশ, বিভিন্ন চর্ম রোগ হয় ।
মাথা ব্যথা
টক্সিনের অন্যতম লক্ষ্য হল মস্তিষ্কের সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমে বাসা বেঁধে যাওয়া। এর ফলে বিভিন্ন টিস্যু খুব অনুভূতি প্রবণ হয়ে পড়ে। তখন সামান্য কারণেই এই টিস্যুতে যন্ত্রণা দেখা দেয়। এর নাম হল মাইগ্রেন ।
মুড সুইং
প্রসেসড ফুড, এডিটিভ ফুড এবং কৃত্রিম উপায়ে তৈরি খাবার থেকে এক ধরণের টক্সিন শরীরে ঢোকে যাতে জেনোইস্ট্রোজেন থাকে। এ ধরণের টক্সিন এর প্রভাবে হঠাৎ করেই মেজাজের পরিবর্তন ঘটে। শুধু তাই নয় এস্পারটেস নামক এক ধরণের টক্সিন শরীরে প্রবেশ করলে ডিপ্রেশন হয়। যারা এসব খাবার বেশি খান তারা ডিপ্রেশনের শিকার হন।
পেশিতে ব্যথা ও কালশিটে
কোন চোট লাগেনি কিন্তু শরীরে বিভিন্ন পেশিতে ব্যথা হচ্ছে। সঙ্গে রয়েছে কালশিটে। এটা অত্যধিক টক্সিনের লক্ষণ। খাবার, ঘর পরিষ্কার করার বিভিন্ন জিনিস, প্রসাধনী ইত্যাদি ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে আমাদের শরীরে স্ট্রেস পড়তে থাকে এবং ডিফেন্স সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে। এতে পেশিতে অক্সিজেনের জোগান কমে যায়, তার ফলেই পেশিতে ব্যথা হয়। সঙ্গে কালশিটে পড়ে যায়।
শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া
শরীরে অত্যধিক টক্সিন জমে গেলে রক্তের সঙ্গে তা লিভারে পৌছায়। লিভার তখন সেই টক্সিন মিশ্রিত রক্ত শোধন করতে অতিরিক্ত কসরত করে।এর ফলেই দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।সঙ্গে প্রচুর ঘাম হয়।
অনিদ্রা
শরীরে টক্সিন বেড়ে গেলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে বা ঘুম আসে না। কারণ টক্সিন শরীরের টিস্যুতে জমা হয়, ঠিক মতো ব্লাড সার্কুলেশন হতে দেয় না।
যকৃতে অসুবিধা
যকৃতে টক্সিন জমা হবার ফলে যকৃতের মুখ বুজিয়ে দেয়। এতে করে জিভে হলুদ দাগ পড়ে যায়। যদি এমনটা হয় তবে বুঝবেন রক্তে টক্সিন বেড়ে গেছে।
পেটে অতিরিক্ত মেদ জমা
শরীরে ক্ষতিকারক টক্সিন বেড়ে গেলে শরীরে গ্লুকোজ লেবেল ব্যালেন্সড থাকে না। এর সঙ্গে কোলেস্টেরলকে সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারে না। ফলে পেটে মেদ জমে যায়।
নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ
প্রসেসড ফুড খাওয়ার ফলে শরীরে অত্যধিক মাত্রায় শর্করা প্রবেশ করে। যাতে ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া তৈরি হয় এবং বাড়তে থাকে। তা পরিপাক তন্ত্র তো বটেই সঙ্গে মুখেও বাসা বাধে। ফলে হয় দুর্গন্ধ। এছাড়াও অত্যধিক ঢেকুর এবং হজমের সমস্যা হয়ে থাকে