অনেকেই সকালে ঘুম ভাঙা মাত্র গরম গরম চায়ের পেয়ালায় চুমুক মারতে ভালোবাসেন। কিন্তু এমন অভ্যাস কেন, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধরণা করা না গেলেও একটা বিষয়ে চিকিৎসকেরা নিশ্চিত হয়েছেন যে এভাবে দিনের পর দিন খালি পেটে চা বা কফির মতো পানীয় খাওয়ার কারণে শরীরের উপর কিন্তু মারাত্মক খারাপ প্রভাব পরে। শুধু তাই নয়, ধীরে ধীরে ব্রেন ফাংশনেরও অবনতি ঘটতে শুরু করে। তাই সারা দিন ধরে চা পান করুন ক্ষতি নেই, কিন্তু শরীরের কথা ভেবে সকাল সকাল, বিশেষত খালি পেটে এমন পানীয় খাওয়ার ভুল কাজটি করবেন না যেন!
আসলে চায়ে উপস্থিত ক্যাফিন শরীর প্রবেশ করা মাত্র এনার্জির ঘাটতি দূর হয় ঠিকই, কিন্তু সেই সঙ্গে শরীরের নানাবিধ ক্ষতিও হয়ে থাকে। আর যদি খালি পেট থাকাকালীন ক্যাফিনের প্রবেশ ঘটে, তাহলে তো কথাই নেই। সে ক্ষেত্রে শরীরের মারাত্মক কিছু ক্ষতি হয়ে থাকে। যেমন ধরুন-
মাথা ঘোরা এবং ডিজিনেসের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে
চায়ে থাকে প্রচুর মাত্রায় ক্যাফিন, যা খালি পেট থাকালীন শরীরে প্রবেশ করলে দেহের ভেতরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে তার প্রভাবে হঠাৎ করে মাথা ঘুরে যাওয়া বা বমি পাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সাবধান!
অ্যাংজাইটির মাত্রা বাড়ে
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে, সকাল সকাল খালি পেটে চা পান করলে মস্তিষ্কের ভেতরে এমন কিছু হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যার প্রভাবে স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটির মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে শরীর ভাঙতে দেরি লাগে না কিন্তু!
ধীরে ধীরে দাঁত দুর্বল হতে শুরু করে
দাঁত না মেজেই চা বা কফি খেলে মুখ গহ্বরের ভেতরে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে দাঁতের উপরের আবরণ বা এনামেল নষ্ট হয়ে যেতে শুরু করে। আর এমনটা হতে থাকলে এক সময়ে গিয়ে দাঁতের ক্ষয় আর আটকানো যায় না। শুধু তাই নয়, বেশ কিছু কেস স্টাডি করে দেখা গেছে এমন অভ্যাসের কারণে জিনজিভাইটিসসহ একাধিক গাম ডিজিজ হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। তাই দাঁতকে দীর্ঘদিন সুস্থ রাখতে দয়া করে বেড টি পান বন্ধ করুন।
শরীরে ক্ষতিকর অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়
রাতের বেলা ঘুমিয়ে পরার পর থেকেই হাজারো ব্যাকটেরিয়া মুখ গহ্বরে জমতে শুরু করে। সেই কারণেই তো সকালে উঠে মুখে এত গন্ধ হয়। এমন পরিস্থিতিতে দাঁত না মেজেই যদি চা বা কফি পান করা হয়, তাহলে এই সব ব্যাকটেরিয়া খাদ্য নালি হয়ে এসে পৌঁছায় স্টমাকে। ফলে সেখানে অ্যাসিডের মাত্রা এতটাই বেড়ে যায় যা নানাবিধ সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। তাই যারা গ্যাস-অম্বল বা বদ হজমের সমস্যায় ভোগেন, তাদের তো ভুলেও দাঁত না মেজে চা বা কফি পান করা উচিত নয়।
দেহে জলের ঘাটতি দেখা দেয়
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে, চা খাওয়া মাত্র নানা কারণে শরীরে জলের মাত্রা কমতে শুরু করে। আর এমনটা পেট খালি থাকাকালীন হলে কিন্তু মহা বিপদ। এই কারণেই তো ঘুম ভাঙা মাত্র চা পান করতে মানা করেন চিকিৎসকেরা। আসলে দীর্ঘ ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর কারণে এমনিতেই শরীর জলের ঘাটতি থাকে, তার উপর চা পান করা হয়, তাহলে ডিহাইড্রেশনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা যায় বেড়ে।
পেটের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়
সকাল সকাল খালি পেটে চা বা কফি পানের অভ্যাস থাকলে পেটের ভেতরে, বিশেষত পাকস্থলীতে মারাত্মক প্রদাহ সৃষ্টি হয়, যা স্টামক ইনফেকশনের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে পেপটিক আলসারের মতো রোগ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়।
দেহে ক্ষতিকর টক্সিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে
সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই এক গ্লাস জল খাওয়া উচিত, যাতে শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান বেরিয়ে যেতে পারে। কিন্তু এমনটা না করে যদি কেউ এক পেয়লা চা পান করেন, তাহলে টক্সিক উপাদানের মাত্রা কমে তো নাই, উল্টো আরও বেড়ে যায়। ফলে শরীরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর, যেমন ধরুন- লিভার, কিডনি এবং ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে।
হজম ক্ষমতার অবনতি ঘটে
খালি পেটে চা পান করা মাত্রা মুখ গহ্বরে উপস্থিত খারাপ ব্যাকটেরিয়ারা শরীরে নানা অংশে পৌঁছে যেতে শুরু করে। ফলে খারাপ জীবাণুর দাপটে স্টমাকে উপস্থিত ভাল ব্যাকটেরিয়ারদের সংখ্যা কমে যেতে শুরু করে। ফলে ধীরে ধীরে হজম ক্ষমতা কমে যায়। সেই সঙ্গে অ্যাসিড-অ্যালকেলাইন ব্যালেন্স বিগড়ে গিয়ে নানাবিধ পেটের রোগ শরীরে এসে বাসা বাঁধে।
শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়
একাধিক গবেষণায় এ কথা প্রমাণিত হয়ে গেছে, দীর্ঘ দিন ধরে বেড টি খেয়ে গেলে শরীরের পক্ষে ঠিক মতো আয়রন শোষণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে অ্যানিমিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, তৃতীয় বিশ্বের নারীদের প্রায় সিংহভাগই অ্যানিমিক হন। সেই কারণেই তো চিকিৎসকেরা পৃথিবীর এই প্রান্তের অধিবাসীদের বেড টি থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকার পরামর্শ দেন।