খিটখিটে মেজাজ ভালো করার কিছু সহজ উপায়, জেনেনিন

কোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির শিকার হলে রাগ এসে যাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে তা অনিয়ন্ত্রিত হওয়া মানবীয় ত্রুটি। অল্পতেই ধৈর্য হারিয়ে ফেলছেন। এর-ওর সঙ্গে ঝগড়া লেগে যাচ্ছে। অথচ আপনি এমন ছিলেন না। ইদানীং কী এমন হলো যে আপনার মেজাজ এত খারাপ যাচ্ছে? এমন হতে পারে কি, আপনি শারীরিক বা মানসিক কোনো সমস্যায় ভুগছেন?

হঠাৎ মন-মেজাজের পরিবর্তন, আকস্মিক রাগ বা আবেগের বহিঃপ্রকাশ—মানুষের স্বাভাবিক আচরণের মধ্যেই পড়ে। পারিবারিক বা কর্মক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হচ্ছে বা ভেতরে ভেতরে কোনো উদ্বেগ-অনিশ্চয়তায় ভুগছেন, যা আপনার অস্বাভাবিক আচরণে প্রকাশ পাচ্ছে।

অনেক সময় অতি-আবেগ বা অতি-রাগ, অতিরিক্ত মেজাজ দেখা যেতে পারে। এর সঙ্গে ভুল বা আজগুবি ধারণা, অনিদ্রা, সন্দেহ, অস্থিরতা ও মনোযোগের অভাব দেখা দেয়। কোনো আঘাত বা শোকের পরও এমন হতে পারে, যাকে বলা হয় পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার। উদ্বেগজনিত সমস্যায় মেজাজ খারাপ থাকতে পারে অনেকের। আকস্মিক খিটখিটে মেজাজের এমন পরিবর্তনের সঙ্গে মনের অন্যান্য পরিবর্তন থাকলে প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সেরোটোনিন একটি রাসায়নিক যা স্নায়ু কোষ দ্বারা তৈরি এবং শরীরের অন্যান্য কোষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। যদিও এটি মেজাজ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সংযুক্ত একমাত্র রাসায়নিক নয় (ডোপামিন, অক্সিটোসিন এবং এন্ডোরফিন্স এই কাজে ভুমিকা রাখে)। তবে এটাও গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

আবার সারাদিন কাজ শেষে খুব সহজেই দেহে ক্লান্তি চলে আসে। আবার অনেকে অবসাদেও ভুগেন। আর সেখান থেকে মেজাজ খিটখিটে হওয়া খুব স্বাভাবিক। তাছাড়া মানসিক নানা চাপের কারণেও মেজাজের নিয়ন্ত্রণ থাকে না।

এক্ষেত্রে বিভিন্ন খাবারে কিছুটা স্বস্তি মেলে। তবে অবশ্যই সেগুলো পরিমিত খেতে হবে।

চকলেট

চকলেটে ফিনাইলিথ্যালাইমিনের বেশ কয়েকটি কার্যকর মিশ্রণ রয়েছে যা এন্ডোরফিন এবং আনন্ডামাইডকে বাড়ায়। চকলেট সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণা দেখায় যে, এটি খিটখিটে মেজাজ এবং জ্ঞানকে উন্নত করতে পারে, পাশাপাশি এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস।

গ্রিন টি

মন খারাপ থাকলে এক কাপ গ্রিন টি খেতে পারেন। এটি নার্ভকে শান্ত করে এবং মুড ভাল করতে সাহায্য করে। জাপানী এক গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে ২ থেকে ৩ কাপ গ্রিন টি খেলে বয়স্কদের হতাশা কাটে। এতে থাকা অ্যামিনো এসিড উদ্বিগ্নতার সঙ্গে লড়াই করে মন ভাল করতে সাহায্য করে।

বাদাম

আখরোট, চিনা বাদাম, পেস্তা, কিসমিসের আশ্চর্যজনক পুষ্টিমান রয়েছে। এগুলো অবশ্যই আপনার খাবারের তালিকায় যুক্ত করা উচিত। এগুলো ফাইবার, প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাটে পূর্ণ সুপার হেলথ খাবার।কাজু বাদাম এবং অন্যান্য বাদাম অল্প করে খান যাতে আপনার কার্ব এবং ক্যালোরি স্তর ঠিক থাকে। সকাল ১১টার দিকে একমুঠো মিশ্র বাদাম খাওয়ার চেষ্টা করুন। এটি স্বাস্থ্যকর নাস্তা। বাদামে আপনার মেজাজ, ত্বক এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের দীর্ঘমেয়াদী সুবিধার জন্য ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে।

ভিটামিন ডি

মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকতে ভিটামিন ডি ভালো কাজ করে। এই ভিটামিন মেজাজ খিটখিটে হতে বাধা দেয়। কোনও কারণ ছাড়া হতাশা জেঁকে ধরলে বুঝবেন শরীরে হয়তো ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি আছে। এর অভাব পুষিয়ে নেওয়া যায় সহজেই। প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সূর্যালোকে থাকার চেষ্টা করুন।

ডিম

আমরা সবাই বিভিন্ন পদ্ধতিতে রান্না করা ডিম খেতে পছন্দ করি। সুসংবাদ হলো; ডিম খেলে আপনার মেজাজ ভালো থাকবে। ডিমে প্রোটিন, ভিটামিন ডি, বি ১২ বেশি থাকে এবং কোলিনযুক্ত থাকে, এটি এমন একটি পুষ্টি যা স্নায়ুতন্ত্রকে সমর্থন করে। যা আপনার মেজাজ ভালো রাখতে কাজ করে। ডিমে রয়েছে ট্রিপটোফেন এবং উচ্চ কোলিন (ভিটামিন বি)এবং প্রোটিন। কোলিন সরাসরি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে ও মন ভালো রাখে।

পনির

মন ভালো রাখার পেছনে কেবল পনিরের স্বাদ নয় বরং এতে থাকা ট্রিপ্টোফেন ভূমিকা পালন করে। ‘শেডার’ পনিরে এই রাসায়নিক উপাদানের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই খাবার তালিকায় এটা রাখা জরুরি।

মধু

বিশেষজ্ঞদের মতে, মধুর রং ও স্বাদ মন ভাল করতে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ মধু ফ্রি রেডিকেল ও দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে। সেই সঙ্গে বিষণ্ণতা প্রতিরোধ করে।

ভিটামিন বি-১২

অবসাদ, ক্লান্তি ইত্যাদি বেড়ে যায় ভিটামিন বি ১২-এর অভাবে। গড়ে প্রতিটি মানুষের প্রতিদিন ২.৪ মাইক্রোগ্রাম পরিমাণ ভিটামিন বি ১২-এর দরকার হয়। পনির, কম চর্বিযুক্ত দই, দুধ- এসব ভিটামিন বি ১২ এর চাহিদা পূরণে বেশি ভুমিকা রাখে। আধুনিক বিজ্ঞান বলে ভিটামিন বি১২ আমাদের শরীরে ভালো লাগার হরমোনকে উদ্দীপ্ত করে। ফলে মেজাজ ফুরফুরে থাকে।

অ্যাভোকাডো এবং বেল পেপার

অ্যাভোকাডোর পুষ্টিকর ফ্যাট এবং সুপার ক্রিমযুক্ত টেক্সচার মেজাজ ভালো রাখার খাবার হিসেবে বিবেচিত। এতে ভিটামিন বি ৬, ভিটামিন বি ৫, ফাইবার, ভিটামিন ই, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই খাবার ভিটামিন এবং পুষ্টি নিউরোট্রান্সমিটার সংশ্লেষ করতে সাহায্য করে। রঙিন বেল পেপার রাখুন খাবারের তালিকায়। এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি বেশি রয়েছে যা মেজাজ উন্নত করতে ও সঙ্কট হ্রাস করতে সাহায্য করে।

মরিচ

মরিচ খাওয়ার পর মজার ঝাল স্বাদটা যখন জীবে লাগে, তখনই এন্ডোরফিন, অর্থাৎ আরো একটি সুখ হরমোন শরীরে ছড়িয়ে যায়৷ তাই কেউ যদি প্রচণ্ড ঝাল দিয়ে স্প্যাগেটি বা নুডলস রান্না করে খান, তাহলে তাঁর আনন্দের মাত্রা বেড়ে হতে পারে দ্বিগুণ!

ভিটামিন সি

ভিটামিন সি-কে বলা যেতে পারে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার যম। জটিল পরিস্থিতিতে পড়লে আগে এক গ্লাস কমলার জুস খেয়ে দেখা যায়। মাথার ভার অনেকটাই কমে আসবে। মনকে সতেজ ও শক্তিশালী রাখতে ভিটামিন সি অনবদ্য।