কান ছোটখাটো বিষয় মনে করে আমরা তেমন একটা গুরুত্ব দেই না। সাধারণত কানে ব্যথা বা কান ভারী ভারী লাগলে আমরা খোচাখুচি করি। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন কানে ব্যথা, কান ভারী লাগা বা কানের সমস্যার পিছনে লুকিয়ে থাকতে পারে কোন ইনফেকশন।
শুধু মাত্র শীতকালে ঠান্ডা লেগেই কিন্তু কানে ইনফেকশন হয় না। সারাবছরেই কানে ইনফেকশন হতে পারে। তবে কেন এই ইনফেকশন হয় এবং কী ভাবে তা রোধ করা সম্ভব, তা আগে থেকে জেনে রাখা ভাল।
কানের ইনফেকশন কেন হয়?
সাধারণত কানের বাইরের দিকে বা মিড্ল ইয়ারেই ইনফেকশন হয়ে থাকে। চিকিৎসকরা বলেন, ঠান্ডা লাগলে নাকের সর্দি কানের দিকে চলে গিয়ে ইনফেকশন বাধায়। বড় থেকে বাচ্চা সকলেরই কানের ইনফেকশন হতে পারে। এখন শরীর সুস্থ রাখতে অধিকাংশ লোকই সাঁতার কাটে। তারপরে কান পরিষ্কার করতে ইয়ার বাড ব্যবহার করা হয়। ফলে খুব সহজেই কানে ব্যাকটিরিয়া প্রবেশ করে ও ইনফেকশন হতে পারে। এক্সটার্নাল ইয়ারে তখন ফাঙ্গাল ইনফেকশন হওয়াটা খুব স্বাভাবিক।
অনেকেরই স্বভাব থাকে কটন বাড দিয়ে সারাক্ষণ কান পরিষ্কার করার। সেটা আরও বিপজ্জনক। মনে রাখতে হবে, সেগুলো হল কটন বাড। ইয়ার বাড নয়। প্রত্যেকের কানেই একটা ওয়্যাক্সের স্তর থাকে, যা কানের অন্দরমহলকে বাইরের ধুলোবালি থেকে রক্ষা করে। কিন্তু ঘন ঘন কটন বাড দিয়ে কান খোঁচালে সেই স্তর নষ্ট হয়ে যায়।
এ ছাড়াও খুব ঠান্ডা লেগে আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাকে ইনফেকশন হলে তা পৌঁছে যেতে পারে কানে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ব্যথা হলে কী করবেন
বাচ্চাদের কানে ইনফেকশন হওয়া খুব স্বাভাবিক। বাচ্চাদের কানে ব্যথা হলে তারা কানে হাতই দিতে দেয় না। সে ক্ষেত্রে বাচ্চার কানে বেশি হাত না দেওয়াই ভাল। টর্চ দিয়ে ভিতরে কী হয়েছে তা কান টেনে দেখার চেষ্টা করলে বাচ্চার আরও ব্যথা বাড়তে পারে। বরং অল্প অল্প করে সেঁক দেওয়া যেতে পারে। গরম তেল জাতীয় কোন কিছু কানের ভিতরে দেবেন না। একই বাচ্চার বার বার ইনফেকশন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
যেগুলো করা যাবে না
• বাচ্চারা যাতে কানে কিছু দিয়ে খোঁচাখুচি না করে, সে দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। বাচ্চার সামনে আপনাকেও সংযত থাকতে হবে।
• প্রত্যেকটি ইয়ারড্রপ ব্যবহারের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। কোনও মতেই পুরনো ইয়ারড্রপ ব্যবহার করবেন না।
• কানে আঙুল দিয়ে খোঁচাবেন না। নখ বড় থাকলে তা থেকে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বড়দের ক্ষেত্রেও মোটামুটি একই বিধান। কানে ব্যথা হলে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে হালকা সেঁক নেওয়া যেতে পারে। কানে জল ঢুকে গেলে অনেকেই ফের কানে জল ঢুকিয়ে সেই কান পরিষ্কার করার চেষ্টা করেন। সেটা কিন্তু একেবারেই উচিত নয়। বরং তোয়ালে দিয়ে চেপে চেপে যতটা জল মুছে নেওয়া যায়। বাকিটা ঠিক সময় মতো বেরিয়ে যাবে।
কান পরিষ্কার রাখতে কী করবেন
কান পরিষ্কার রাখার জন্য বাইরে থেকে কিছু করার প্রয়োজন নেই। চিকিৎসকদের মতে, কানকে নিজের মতো থাকতে দিন। কান নিজেই নিজেকে পরিষ্কার রাখতে সক্ষম। কান পরিষ্কার করতে বার বার কটন বাড ব্যবহার করা, জল দেওয়ার স্বভাব থাকলেই বরং কানে ইনফেকশনের আশঙ্কা বাড়তে পারে। তার চেয়ে বরং রোজ স্নানের পরে তোয়ালে দিয়ে কানের যতটা অংশ পারেন মুছে নিন। জোর করে কানের ভিতরে খোঁচাখুচি করবেন না।
যে বিষয়গুলো সম্পর্কে সতর্ক থাকবেন
• ছোট বাচ্চাকে কোলে শুইয়ে দুধ খাওয়ানোর সময়ে খেয়াল রাখবেন, তার কানে যেন দুধ চলে না যায়। অনেক সময় বাচ্চাদের কানে দুধ ঢুকে ইনফেকশন হওয়ার ভয় থাকে।
• সেফটিপিন বা কোন কাঠি দিয়ে কখনওই কান খোঁচাবেন না।
• মোবাইলের সঙ্গে সকলেই প্রায় ইয়ারফোন ব্যবহার করে থাকেন। কারও সঙ্গে ইয়ারফোন শেয়ার না করাই ভাল। ইয়ারফোন ব্যাগের মধ্যে ফেলে রেখে দিলে তাতে ধুলোবালি ও ব্যাকটিরিয়া বাসা বাঁধতে পারে। কানে গোঁজার সময়ে তা সহজেই কানের ভিতরে প্রবেশ করে। ফলে ইনফেকশন হতে বেশি সময় লাগে না।
• কান ভারী লাগলে বা কানে শুনতে অসুবিধে হলে তখনই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
• অনেক সময়ে কান কিংবা গলায় ব্যথা হলেও তার কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। তখন কানের গর্তের নীচের অংশে আঙুল দিয়ে ধরে মুখ হাঁ করার চেষ্টা করুন। এতে যদি কান আর গলার সংযোগস্থলে ব্যথা লাগে, বুঝতে হবে আর্থ্রাইটিস হয়েছে। টিএম (টেম্পোরো ম্যান্ডিবুলার) জয়েন্টে আর্থ্রাইটিস হলে এ রকম ব্যথা হতে পারে।
কান ধরে বেশি টানাটানি না করে বরং ওকে ওর মতোই থাকতে দিন। দেখবেন, সে নিজেও ভাল থাকবে আপনিও সুস্থ থাকবেন।