স্টিমের প্রধান কাজ ত্বকের ভেতরের ময়লা বের করে আনা। গরম বাষ্পের স্পর্শে ত্বকের উপরের অংশ ঘেমে ওঠে। রোমকূপের মুখ খুলে যায়, সেখানে আটকে পড়া জমাট বাঁধা তেলময়লা গলে বাইরে বেরিয়ে আসে।
স্টিম মৃত কোষের পরতও তুলে দেয়। স্টিম রক্ত চলাচল বাড়ায়, তাই মুখ উজ্জ্বল হয়। রক্ত চলাচলের কারণে ত্বকে কোলাজেন আর ইলাস্টিন তৈরির মাত্রা বাড়ে। চামড়া টানটান নিটোল থাকে, বয়স কম দেখায়।
বাষ্পে তৈলগ্রন্থিগুলো উদ্দীপিত হয়, প্রাকৃতিকভাবেই ত্বক ময়েশ্চারাইজড থাকে। ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করায় ব্রণের সমস্যা দূর হয়। নিয়মিত স্টিম নিলে ত্বকের শোষণ ক্ষমতা বাড়ে।
বিশুদ্ধ জল ও চা পাতা ছেঁকে নেয়া লিকারকে স্টিমের জন্য ব্যবহার করা যায়। ত্বকের ধরন বুঝে সেই তরলে বিশেষ উপকরণ মিশিয়ে নেয়া যায়। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য কয়েকটি তাজা তুলসি পাতা জলে দিয়ে দিন। ভাপ নেয়ার ঠিক আগে দু-তিন ফোঁটা টি ট্রি অয়েল দেবেন।
শুষ্ক ত্বক হলে, শুকনো গোলাপের পাপড়ি আর কুঁড়ি মিশিয়ে তরল ফোটান। ক্যামোমিল, ল্যাভেন্ডারের নির্যাস মেশাতে পারেন।
মিশ্র ত্বকের জন্য ল্যাভেন্ডারের নির্যাস, জেরেনিয়াম এসেনশিয়াল অয়েল তিন ফোঁটা। এই উপকরণ সংবেদনশীল ত্বকেও কাজ করে। অ্যাকনের সমস্যা থাকলে ইউক্যালিপ্টাস অয়েল দিতে পারেন।
বিবর্ণ ত্বকের জন্য কমলার খোসা, তিন ফোঁটা লেমন এসেনশিয়াল অয়েল মেশান। সব উপকরণই প্রসাধনীর দোকানে সহজেই মেলে।
পাত্রে পরিমাণমতো জল দিয়ে চুলায় বসান। জল ফুটতে শুরু করলে ভেষজ দেবেন। তারপর কম আঁচে দু-তিন মিনিট রেখে, দরকার মতো এসেনশিয়াল অয়েল ফেলে টেবিলের উপরের বাটি বা গামলায় জলটুকু সাবধানে ঢালবেন। ওই পাত্রের উপর খুব সাবধানে ঝুঁকে মুখ আর গলা গরম বাষ্পের সংস্পর্শে আনুন। পরিষ্কার, নরম, বড় তোয়ালে মাথার উপর দিয়ে রাখুন। জল থেকে মুখ অন্তত ছয় ইঞ্চি দূরে রাখুন। স্টিম নেবেন পাঁচ থেকে দশ মিনিট, তার বেশি নয়।
বাষ্পের সংস্পর্শে ত্বক যেন পুড়ে না যায়। এতে বড় ক্ষতি না হলেও ত্বকে দাগ হয়ে যেতে পারে। স্টিম নেয়ার সময় চোখ বন্ধ রাখুন। স্টিম নেওয়ার পর তোয়ালে দিয়ে ত্বকে ঘষবেন না। তোয়ালে যেন প্রচণ্ড গরম না হয়। দুমিনিট মতো স্টিম নিয়ে বিরতি নিন। বাষ্পের তাপ ত্বকে সহ্য হচ্ছে কিনা বুঝতে পারবেন। এক মিনিট পর আবার ভাপ নেবেন।
সপ্তাহে একদিন স্টিম নেয়া ভালো। খুব শুষ্ক বা সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রে বর্ষা কালে তিন সপ্তাহ পরপর থেরাপিটি চলতে পারে। ত্বকে কোনো সংক্রমণ থাকলে স্টিম নেবেন না। স্টিম নেয়ার পর হালকা গরম জল ত্বকে ছিটিয়ে ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে নিন। এরপর ময়েশ্চারাইজার লাগান। কোনোরকম বাড়তি খরচ ও ঝামেলা ছাড়াই আপনি পেয়ে যাবেন সতেজ ও সুন্দর ত্বক।