জেনেনিন, সুস্থ শরীরের জন্য দিনে কতটুকু জল পান করা উচিত

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে মানুষ বাইরে তেমন একটা বের হচ্ছে না। আবার কিছু কিছু এলাকায় চলছে লকডাউন। দীর্ঘ সময়ে ধরে গৃহবন্দি থাকায় সব নিয়মই এখন এলোমেলো। তাই অনেকের জল খাওয়াও গেছে কমে। বাইরে বেরুলে পরিশ্রম এবং ঘাম হয় বেশি, তাতে তৃষ্ণা বাড়ে। কিন্তু বাড়িতে থাকলে তা আর হয়ে উঠে না। এর ফলে শরীরে প্রতিদিনই জল কম যাচ্ছে। জানেন, কম জল পান থেকে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে শরীরে!

আবার অনেকে আছেন যারা জল খাওয়া ভাল বলে কথায় কথায় গ্লাস গ্লাস খেয়ে নেন। অতিরিক্ত জলও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আবার কেউ কেউ স্বাভাবিক প্রয়োজনের তুলনায় কম জল খান। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন কোষে জলের পরিমাণ কমে গিয়ে তখন শুরু হয় নানা সমস্যা।

দিনে সাত থেকে আট গ্লাসের কম জল খেলে যে সমস্যা হতে পারে তা এবার জেনে নিন….

১. কম জল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। এছাড়া খাবার ঠিক মতো হজম হতেও অসুবিধা হয়। খাবার খেলে তা ক্ষুদ্রান্ত্রে শোষিত হয়, বাকি বর্জ্য পদার্থ কোলনে চলে গিয়ে মল হয়ে বাইরে যায়। এই পুরো প্রক্রিয়াটির সময় শরীরে বিভিন্ন নিউট্রিয়েন্টস ও জলীয় অংশ শোষিত হয়। কম জল খেলে মল হয়ে উঠবে কঠিন। মলত্যাগ করা কষ্টকর হবে। ক্রমশ অর্শ, অ্যানাল ফিশার সহ মলদ্বারের নানা রোগের সম্ভাবনা বাড়বে।

২. শরীরে কম জল থাকায় বিপাকীয় ক্রিয়ায় তৈরি কিছু অপ্রয়োজনীয় ও বিষাক্ত পদার্থ জমে গিয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।

৩. রক্ত সংবহনের জন্যে ৩৫ শতাংশ জলীয় পদার্থ দরকার হয়। জল কম খেলে শরীরের মোট রক্তের আয়তন অর্থাৎ ব্লাড ভলিউম কমে যায়। ফলে রক্তচাপ নেমে যেতে পারে। কম রক্তচাপ থাকলে মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছতে অসুবিধা হয়। এই কারণে সারাদিনই ক্লান্ত লাগে, ঘুম পায়, বাচ্চাদের পড়াশোনায় মন বসে না, বড়দেরও কাজ করতে আলসে ভাব দেখা দেয়।

৪. শরীরে জল কম থাকলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। একইসঙ্গে দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব না করার জন্য মূত্রনালীতে সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে।

৫. কম জল খেলে কিডনিতে রেচন পদার্থ জমে গিয়ে কিডনির কাজ কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

৬. কোনও কাজে মনঃসংযোগ করতে অসুবিধা হতে পারে।

তাহলে কী পরিমাণ জল খাবেন?

গরম কালে আট থেকে বারো গ্লাস জল পান করা উচিত। তবে যদি কিডনি বা হার্টের অসুখ থাকে তখন জল খাওয়ার ব্যাপারে কিছু বিধি নিষেধ থাকে। যারা রোদে ঘোরাঘুরি করেন বা অনেক বেশি পরিশ্রম করেন তাদের চাহিদা অনুযায়ীই জল খেতে হবে। যাদের কম তৃষ্ণা, ছোট থেকেই কম জল পান করায় অভ্যস্ত তাদের অবশ্যই ৮ থেকে ১০ গ্লাস জল পানের অভ্যাস করতে হবে।

নচেৎ বিপদে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে জল খেলে পেটের ভেতরে জমে থাকা অপ্রয়োজনীয় পদার্থ প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বাইরে বেরিয়ে যায়। সারাদিন জল খেলেও সন্ধ্যার পর থেকে কম জল খাওয়া উচিত। বেশি বয়সের পুরুষদের প্রস্টেটের অসুখ থাকলে সন্ধ্যার পর জল পান কমিয়ে না দিলে রাতে ঘুম হবে না।

বেশি জল খাওয়াও ভাল নয়

জল খাওয়া ভাল বলে অনেকে ৮ থেকে ১০ লিটার পর্যন্ত খেয়ে ফেলেন। এর কোনও দরকার নেই, ৩ থেকে সাড়ে ৩ লিটার জলই যথেষ্ট। বাড়তি জল শরীরে সোডিয়াম পটাশিয়ামের ভারসাম্য বিঘ্নিত করতে পারে। রোদে দীর্ঘক্ষণ খেলার পর ঢক ঢক করে একসঙ্গে অনেকটা জল খেলে অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এর ফলে শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে গিয়ে আচমকা জ্ঞান হারানোর ঝুঁকি থাকে।

এছাড়া শরীরে নানান মিনারেলসের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে কথাবার্তা অসংলগ্ন হতে পারে এবং লেথার্জি লাগে অর্থাৎ কোনও কাজ করতে ইচ্ছে করে না। যাদের মনের অসুখ আছে, তারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত জল পান করেন। সুতরাং বেশি বা খুব কমও নয়, দিনে ৮ থেকে ১২ গ্লাস জল পানই যথেষ্ট একজনের জন্য।