হরমোন জনিত যেসব কারণে আপনার ত্বকে সমস্যা হয়! দেখেনিন

ত্বকের নানা সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। জানেন কি হরমোনের কারণেও ত্বকে দেখা দিতে পারে নানা জটিলতা? এ বিষয়ে পরামর্শ দিলেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ মো. মাজহারুল হক তানিম। লিখেছেন আতিফ আতাউর।
হরমোন শব্দের অর্থ হলো প্রাণরস। এটি একপ্রকার তরল বা রস, যা শরীরের এক জায়গা থেকে নিঃসৃত হয়ে সারা শরীরে কাজ করে। আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকম অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থাকে। এই গ্রন্থিগুলো থেকে রস বের হয়। এই রস যে জায়গায় বের হয়, তার কাছাকাছি অথবা দূরে গিয়ে কাজ করে। এই প্রাণরস মানবশরীরে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর কারণে আমরা প্রাণবন্ত থাকি। বলতে গেলে আমাদের পুরো জীবনকালকে নানাভাবে হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

হরমোনের যেমন নানা উপকারী দিক আছে, তেমনি আবার হরমোনের তারতম্যের কারণেও শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। কিছু হরমোনের কারণে ত্বকের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। যেমন শরীরে থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি থাকলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। ফলে ত্বক রুক্ষ ও খসখসে হয়ে পড়ে। খসখসে ত্বকে সহজেই চুলকানির মতো সমস্যা দেখা দেয়। আবার চুল পড়ারও অন্যতম কারণ থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি।

ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা বিশ্বব্যাপী দিন দিন বাড়ছে। এটিরও কারণ হরমোন। হরমোন জটিলতায় ডায়াবেটিস হয়। ডায়াবেটিসের কারণে মুখে ঘা, পায়ে ঘা, এমনকি হাত ও পায়ের নখেও সংক্রমণ দেখা দেয়। ফলে ত্বকে চুলকানির মতো সমস্যা দেখা দেয়।

নারীদের শরীরে পুরুষ হরমোন অ্যানড্রোজেন বেড়ে গেলে মুখে ও পিঠে ব্রণ গজিয়ে উঠতে পারে। মুখে অবাঞ্ছিত লোম গজানোর লক্ষণ প্রকাশ পায়। কোনো কোনো নারীর ক্ষেত্রে পুরুষের মতো টাক পড়তে দেখা যায়! শরীরে স্টেরয়েড হরমোনের আধিক্য হলে মুখ লালচে দেখাতে পারে। মুখ ফুলে যেতে পারে। এ ছাড়া ঘাড়ে চর্বি জমে ঘাড় ফুলে যাওয়ার মতো লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।

হরমোনের কারণে ওজন বেড়ে গিয়ে গাল, ঘাড়, গলা, বগলে কালো দাগ দেখা দিতে পারে। পিটুইটারি গ্রন্থিতে হরমোন নিঃসরণ কমে গেলে ত্বক ফ্যাকাসে দেখা দেওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়। থাইরয়েড হরমোনের আধিক্য হলে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। ইনসুলিন দেওয়ার কারণে ত্বকে অ্যালার্জি হতে পারে। এতে ত্বক ফুলে যেতে পারে। অ্যাড্রেনাল হরমোনের ঘাটতির কারণে জিহ্বা, হাত ও কাটা জায়গায় কালো দাগ দেখা যায়। পুরুষের সেক্স হরমোনের ঘাটতি থাকলে দাড়ি-গোঁফ কম গজায়। দীর্ঘদিন পর পর শেভ করাও এর একটি লক্ষণ।

এ সব সমস্যার জন্য একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে সমস্যাগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া ভালো। চিকিত্সায় হরমোনজনিত যেকোনো অসুখ থেকেই পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা, মানসিক চাপমুক্ত থাকা ও পর্যাপ্ত ঘুম শরীরে হরমোনের স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখতে সাহায্য করে।