গ্রাম-বাংলার খুব পরিচিত একটি শাক হল বথুয়া / বতুয়া বা বেথো / বৈতে শাক। বথুয়া শাক মূলত শীতকালে পাওয়া যায়। কেউ চাষ না করলেও জমিতে আগাছার মত আপনা আপনি জন্ম নেয় এ শাক। মূলত এটি আগাছা হিসেবেই জমিতে ওঠে। কিশোরগঞ্জে এই শাক খুবই জনপ্রিয় খাবার। গ্রামাঞ্চলে এই শাক প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। আবার বাজারে আঁটি বেঁধেও বিক্রি হয় এটি।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে সবজির সবচেয়ে বড় বাজার কটিয়াদী নদীর বাঁধ বাজারে প্রতিদিন ভোরে এই শাক নিয়ে আসে কৃষকরা। প্রতি আঁটি ৫ টাকা করে বিক্রি হয়।
এ শাক দামে খুব সস্তা। এ শাকের গড় উচ্চতা ২-৩ ফুট। এটি বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। এ গাছের পাতার রং ফ্যাকাসে সবুজ। কান্ডে উঁচু শিড়া ও বেগুনি রেখা দেখা যায়। পাতার উপর মোমের প্রলেপ থাকায় জল ধরেনা। পাতার নিচেও সাদাটে আস্তরণ থাকে। এ শাকে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, লৌহ, ফসফরাস ও জিংক এবং গুরুত্বপূর্ণ ৮টি অ্যামাইনো এসিড থাকে।
বথুয়া শাক বিভিন্ন রোগ সাড়াতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এ শাক প্রচুর ভেষজ গুণাগুণ সম্পন্ন। হজমশক্তি উন্নত করে, খিদে বাড়ায়, পেট ব্যাথা ও দূর করে। কিডনিতে পাথর হলে বথুয়া শাকের জুস খুব উপকার করে। এক গ্লাস জলে বথুয়া শাক ও এক চা চামচ চিনির মিশিয়ে শরবত তৈরি করে টানা দশদিন খেতে হবে। এতে কিডনিতে থাকলে পাথর গলতে শুরু করে।
ত্বকের শ্বেত জাতীয় রোগ নিরাময়ে বথুয়া শাক দারুণ কাজ করে। এর জন্য চার কাপ বেথুয়া শাক, এক কাপ তিলের তেলের সঙ্গে জ্বাল দিয়ে এক কাপ সমপরিমাণ করুন। প্রতিদিন একবার ক্ষত স্থানে মালিশ করুন। তবে পুরোপুরি এ রোগ সারতে কিছুটা সময় লাগবে। গরম জলে বা আগুনে ত্বক ঝলসে গেলে ঐ স্থানে বথুয়া শাক বেটে লাগিয়ে রাখুন জ্বালা পোড়া কমে যাবে।
প্রসাবে জ্বালা পোড়া করলে আধা কেজি বথুয়া শাক বেটে, তিন গ্লাস জলে শরবত তৈরি করে ছেঁকে নিন। এরপর এতে তিন চা চামচ জিরা গুঁড়ো, তিন চা চামচ লেবুর রস মিশ্রিত করুন। দিনে তিনবার কয়েকদিন খেলেই এ সমস্যা দূর হয়ে যাবে। লিভারের সমস্যা, পিত্ত, মলাশয়ের সমস্যা দূর করে। মুখে ঘা হলে বথুয়া শাক চিবিয়ে খেলে বা রান্না করে খেলে ঘা সেড়ে যায়।