কী খাচ্ছেন তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ কখন খাচ্ছেন, বলছে নতুন গবেষণা

আমেরিকার টেক্সাস ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কী খাওয়া উচিত আর কতোটা খাওয়া উচিত তার থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কখন খাওয়া উচিত। ওই গবেষণায় মানুষের ২৪ ঘন্টা দেহঘড়ির সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের কী সম্পর্ক তা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। গবেষকরা বলছে, ঘুম থেকে জেগে ওঠার প্রথম ৮ থেকে ১০ ঘন্টার মধ্যে খাবার খেতে, যাতে শরীর খাবার হজম করার জন্য যথেষ্ট সময় পায়।

দেহঘড়ির সঙ্গে খাওয়ার সম্পর্ক কোথায়?

আমেরিকার টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাসে সাল্ক ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড: সচিন পাণ্ডা। মানুষের দেহঘড়ির সঙ্গে খাওয়ার সম্পর্ক নিয়ে দশ বছর চালানোর গবেষণার ওপর একটি বই লিখেছেন তিনি।

ওই বইয়ে জানানো হয়েছে, মানুষের দেহের যে নিজস্ব একটা ঘড়ি আছে তার ছন্দের সঙ্গে মিলিয়ে যখন মানুষ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলে তখন মানুষের শরীর সবচেয়ে ভালোভাবে কাজ করে।

শরীরের ঘড়িটি একেকজনের জন্য একেকরকম। শরীরের প্রতিটি কোষ এই ঘড়ির ছন্দ অনুযায়ী কাজ করে। যার অর্থ হল প্রতিটি হরমোন, মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষের প্রতিটি রাসয়নিক, প্রতিটি এনজাইম নি:সারিত হয় এই ঘড়ি ধরে, এমনকী এই ঘড়ি ধরেই শরীরের প্রতিটি জিন তার কাজ করে যায়।

এই ঘড়ির নিয়ম মেনে শরীর খাদ্য হজম করতে এবং তার থেকে পুষ্টি আহরণ করতে পারে মাত্র আট থেকে দশ ঘন্টা পর্যন্ত – বড়জোর ১২ ঘন্টা পর্যন্ত। এই সময়ের বাইরে আমাদের দেহঘড়ি অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে – যেমন শরীরের কোন কোষ মেরামত করা বা কোষ পুনরুজ্জীবিত করার কাজে।

ড: পাণ্ডা এবং তার সহকর্মীরা একইধরনের দু্ই দল ইঁদুরের ওপর তাদের গবেষণা চালান ২০১২ সালে। প্রথম দলটিকে তারা খেতে দেন বেশি চর্বিওয়ালা এবং বেশি চিনিযুক্ত খাবার এবং এমনভাবে তাদের খেতে দেওয়া হয় যাতে দিনের যে কোনো সময় তারা খেতে পারে।

দ্বিতীয় দলটিকে খেতে দেওয়া হলো একই ধরনের, একই মাপের ক্যালরিযুক্ত খাবার- কিন্তু তাদের খাবার জন্য ৮ ঘন্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

ড: পাণ্ডা বলছেন, ১৮ সপ্তাহ পর দেখা যায় প্রথম দলের ইঁদুরগুলো ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং তাদের ওজন বেড়ে গেছে, সেইসঙ্গে তাদের কোলেস্টরলের মাত্রা বেড়ে গেছে এবং অন্ত্রের রোগ দেখা দিয়েছে।

কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে যে ইঁদুরগুলো একই খাবার খেয়েছে কিন্তু খেয়েছে বেঁধে দেওয়া আট ঘন্টার মধ্যে, সেগুলো কোনোধরনের রোগে আক্রান্ত হয়নি।

ড: পাণ্ডা ব্যাখ্যা করছেন, যখন আমরা খাওয়া থামাই, তখন পরিবেশ ও খাবার থেকে যেসব বিষাক্ত জিনিশ আমাদের শরীরে ঢোকে, শরীরের কোষগুলো সেগুলো শরীর থেকে বের করে দেবার প্রক্রিয়া শুরু করে। এ সময় কোলেস্টেরল কমে, মাংসপেশী, চামড়া ও অন্ত্রের ভেতরকার আবরণ এমনকী ডিএনএ-ও মেরামত হয়।

৮ থেকে ১০ ঘন্টার বাইরে যখন কিছু খাওয়া হয়, তখন এই মেরামতের প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। শরীর তখন ওই নতুন খাবার হজম করার এবং তার থেকে পুষ্টি আহরণের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। নির্দিষ্ট সময় বিরতি দিয়ে খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী। বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে ‘বিশ্রাম দিয়ে খাওয়া’ বা ‘টাইম রেস্টেড ইটিং’ বলা হয়।

৮ থেকে ১০, বড়জোর ১২ ঘন্টার মধ্যে খাওয়ার উপকারিতা সবচেয়ে বেশি। এই সময়ের বাইরে স্বাস্থ্যকর খাবার খেলেও তা শরীরের জন্য অদরকারি হয়ে উঠতে পারে।

গবেষণায় আরো দেখা গেছে, যেসব মহিলা প্রতি রাতে একটানা ১৩ ঘন্টা না খেয়ে থাকছেন, তাদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি খুবই কম। খাবার সময় কমিয়ে আনার পর মানুষের ওজন কমে। আগের তুলনায় আরো চাঙ্গা বোধ করে। আগের তুলনায় ভালো ঘুমায়।