তামার পাত্রের জল খাওয়ার ১০ উপকার, অবাক করবে আপনাকেও

প্রাচীনকালে খাওয়ার জল সংরক্ষণ করা হত তামার পাত্রে। দূষণমুক্তিই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য। বর্তমানে আমরা ফিল্টার, পিউরিফায়ার ইত্যাদি ব্যবহার করি জল বিশুদ্ধকরণে। তামার পাত্রে জল সংরক্ষণের কথা আমরা চিন্তাই করতে পারি না।

কিন্তু আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শুধু জল সংরক্ষণের কথা চিন্তা করে তামার পাত্র ব্যবহার করা হলেও আসলে এর রয়েছে অনেক উপকারিতা।

তামারপাত্রে জল রাখলে জলে থাকা সব ধরণের জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয়ে যায়। জল হয়ে ‍ওঠে প্রাকৃতিকভাবেই বিশুদ্ধ। আর তামারপাত্রে সারারাত বা কমপক্ষে চার ঘণ্টা জল রাখলে তামার কিছু গুণাগুণ জলে চলে যায়।

তামা হলো মানবদেহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি মিনারেল। এটা মানুষের শরীরে তৈরি হয় না, খাবার থেকে গ্রহণ করতে হয়। সামুদ্রিক খাবার, পূর্ণ শস্য, ডাল, বাদাম শস্য, চকলেট, সিরিয়াল, আলু, মটরশুটি ও সবুজ পাতাওয়ালা সবজি হলো তামার ভালো উৎস।

জেনে নেওয়া যাক, তামার পাত্রে জল রাখলে কী কী লাভ-

পরিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা

তামায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে এবং পাকিস্থলির প্রদাহ কমায়। এতে করে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায় আলসার, বদহজম ও সংক্রমণ থেকে। এটা শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়, খাবারের পুষ্টি যথাযথভাবে শরীরে শোষণে সহায়তা করে এবং লিভার ও কিডনির কার্যক্রম ঠিক রাখে।

ওজন কমাতে সহায়তা

দ্রুত ওজন কমাতে নিয়মিত তামার পাত্রে সংরক্ষিত জল পানের অভ্যাস করুন। এটা শরীরে মজুদ চর্বি ভেঙে তা যথাযথ কাজে লাগাতে সহায়তা করে।

ক্ষত সারাতে সহায়তা

শরীরের যে কোনো ধরনের ক্ষত দ্রুত সারাতে সহায়তা করে তামা। শুধু শরীরের বাইরের ক্ষত নয় অভ্যন্তরীণ ক্ষতও (বিশেষ করে পাকস্থলির) এটা সারিয়ে দেয়। একইসঙ্গে এটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে।

বার্ধক্যের ছাপ বিলম্বিত করতে

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে চেহারায় পড়া বিভিন্ন ভাঁজ নিয়ে আমাদের চিন্তার শেষ নেই। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় ও কোষ গঠনের সহায়তা করায় তামার পাত্রে জল পানে এটা রোধ করা সম্ভব।

রোগ প্রতিরোধে

বর্তমানে সারাবিশ্বের লোকজন যেসব অসুখে বেশি ভোগে হৃদরোগ তার মধ্যে অন্যতম। তামা এ রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে, এটা রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ এবং রক্তের খারাপ কোলস্টেরলের ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কম রাখতেও সহায়তা করে। একইসঙ্গে ক্যান্সার মোকাবেলায়ও এটা সহায়তা করে।

ব্যাকটেরিয়াকে নষ্ট করতে

ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে এর জুড়ি নেই। ই.কয়েল এবং এস.অরিয়াস নামের প্রকৃতিতে পাওয়া দুটি ব্যাকটেরিয়া যা আমাদের বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী তার বিরুদ্ধে ভালো কাজ করে তামা।

থাইরয়েড গ্ল্যান্ড নিয়ন্ত্রণে

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বর্তমানে থাইরয়েডের সমস্যা বাড়ার অন্যতম কারণ হলো শরীরে তামার পরিমাণ কম থাকা। শরীরে থাইরয়েডের মাত্রা প্রয়োজনের চেয়ে কম বা বেশি- দুটাই ঘটতে পারে একই কারণে।

অস্থিসন্ধির ব্যথা দূর করতে

তামায় অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে যা আর্থ্রাইটিস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো অসুখে সৃষ্ট হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও এটা সহায়তা করে।

ত্বক ভালো রাখতে

শলীরে মেলানিনের প্রধান উপাদান হলো তামা। আমাদের চোখ, চুল ও ত্বকের রং নির্ধারণ করে থাকে মেলানিন। এছাড়া তামা নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে। এতে আমাদের ত্বক থাকে কোমল।

রক্তস্বল্পতা মোকাবেলায়

শরীরের চলমান অধিকাংশ কার্যক্রমে তামার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এটা যে শুধু কোষ গঠনেই সহায়তা করে তা নয়। আয়রন শোষণেও এটা সহায়তা করে। এতে দূর হয় রক্তস্বল্পতা।