শিশু ঠিক মতো খেতেই চায় না? তাহলে জেনেনিন বিস্তারিত ভাবে

বাচ্চা খেতে চায় না? কি করবেন বুঝতে পারছেন না? তবে বয়স অনুযায়ী মানসিক ও শারীরিক বিকাশ অন্য বাচ্চাদের মতো হলে শিশুর খাওয়া নিয়ে মা-বাবার দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। অন্যদিকে কিছু বাচ্চা আছে যারা খায় না যেমন, তেমনি তাদের বৃদ্ধিটাও ঠিকমতো হয় না। সেক্ষেত্রে দেখতে হবে যে বাচ্চাটি অপুষ্টির শিকার হচ্ছে কি না বা তার রক্তশূন্যতা হয়েছে কি না? খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চার ঘন ঘন কোনো সংক্রমণ হচ্ছে কি না। তবে সাধারণত দুশ্চিন্তা না করে কিছু বিষয় খেয়াল রেখে চললেই সমাধান মিলতে পারে এ সমস্যার।

১. পরিপূর্ণভাবে খিদে না লাগলে শিশুরা খেতে চায় না। সেক্ষেত্রে জোড় করে খাওয়াতে গেলে ভালোভালে খুদা লাগেনি বলে প্লেটের খাবার সে শেষ করতে পারবে না।

২. শিশুদের রুটিন মাফিক খাওয়ালে ভালো। যখন-তখন খাবার দেয়ার কারণে যথাসময়ে তার খিদে লাগবে না। আর সে খেতে পারবে না। অনেক শিশু স্কুল থেকে ফিরেই বিস্কুট, ফল বা ফলের রস ইত্যাদি খায়। তার এক ঘণ্টা পর হয়তো দুপুরের খাবারের সময়। তখন সে ঠিকমতো খেতে চাইবে না, কারণ ইতোমধ্যেই তার খিদে নষ্ট হয়ে গেছে। আবার অনেক শিশু সারাদিন ইচ্ছামতো যখন-তখন বিস্কুট, ফল, লজেন্স, আইসক্রিম ইত্যাদি খেয়ে পেট ভর্তি করে রাখে। কিন্তু মূল খাবারের সময় তেমন কিছুই খায় না।

৩. বাইরের খাবার যে একেবারেই দেবেন না তা নয়। যখন বড়দের সঙ্গে কোথাও পার্টিতে যাবে বা পরিবারের সবার সঙ্গে কোথাও ঘুরতে যাবে, নিশ্চয়ই বাইরের খাবার সে খেতে পারবে। তবে তার জন্য আলাদা করে প্রতিদিন বাইরের খাবার ঘরে আনবেন না বা তাকে বাইরে খেতে নিয়ে যাবেন না।

৪. বয়সভেদে শিশুর ক্ষুধা লাগার সময়ে কিছুটা পার্থক্য আছে। আপনার শিশুকে সব সময় নিয়ম বা সময়সূচি অনুযায়ী খেতে অভ্যস্ত করে তুলুন। কী খাওয়াচ্ছেন, তার চেয়ে বড় কথা হলো, কখন খাওয়াচ্ছেন। শিশু খেতে চাইছে না বা খাচ্ছে না—এ অজুহাতে তাকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় খাবার দেবেন না। শিশু একেবারেই খেতে না চাইলে প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। যখন-তখন খাবার দিয়ে তার খিদে নষ্ট করবেন না।

৫. সাধারণত দুই থেকে তিন বছর বয়সী বাচ্চাদের প্রতিবেলা খাবারের মাঝে দুই থেতে তিন ঘণ্টা বিরতি থাকা উচিত। বিরতির এই সময়ে যদি অন্য কোনো খাবার সে না খায়, তবে যথাসময়ে তার ক্ষুধা লাগার কথা।

৬. তিন থেকে চার বছর বয়সীদের জন্য তিন থেকে চার ঘণ্টা বিরতিতে খাবার দেয়া উচিত। এভাবে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কিশোর বয়স পর্যন্ত প্রতিবেলা খাবারের মাঝের বিরতি একটু করে বাড়বে। এরপর বড়দের সঙ্গে তিন বেলা খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

৭. শিশুকে কখনো জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না। তাকে একবার জোর করে খাওয়ালে পরে যখনই তাকে খাওয়াতে চাইবেন, তখনই সে ভয় পাবে। খাবারের প্রতি তার আগ্রহ কমে যাবে।

৮. টিভি দেখার সময় খাওয়ালে শিশুর বদহজম হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। কারণ এ সময় টিভিতে মনোযোগ থাকার কারণে পাকস্থলী থেকে প্রয়োজনীয় পাচক রস নিঃসৃত হয় না। এছাড়াও শিশুদের টিভি বা কার্টুন দেখিয়ে খাবার খাওয়ালে এগুলোতে সে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। এমনিতেই বেশি সময় টিভি দেখা শিশুর জন্য স্বাস্থ্যকর নয়।

৯.ভিন্নতা আনুন শিশুর খাবারে। যদি আপনার শিশু মনের ভাব সে প্রকাশ করতে পারে, তবে সে যা খেতে চায় তা জেনে নিন। তার পছন্দমতো খাবার স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তৈরি করে খেতে দিন। বাইরের খাবরের অপকারিতা সম্পর্কে তাকে বলুন।

১০. শিশুর পছন্দসই খাবার রান্না করুন। সেই খাবারে কৌশলে রাখুন পুষ্টিগুণসম্পন্ন উপকরণ।