কি জিভে জল চলে এসেছে? ফলটিই এমন যে, এর নাম শুনলেই জিভে জল চলে আসে। চাটনি হোক কী আচার। সব যুগের সব বয়সী নারীর সবচেয়ে লোভনীয় ফল যে তেঁতুল সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে শুধু স্বাদের দিক থেকেই নয়, আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও এই ফলটি অসাধারণ।
শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর কর্মক্ষমতা বাড়াতে তেঁতুলের জুড়ি মেলা ভার। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা দেহের প্রদাহ কমিয়ে বিভিন্ন রোগ দূরে রাখে। দৃষ্টিশক্তি, ত্বক বা শারীরিক নানা সমস্যায় ফলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই রোগ মুক্ত সুস্থ শরীরের জন্য নিয়মিত তেঁতুল খাওয়া যেতেই পারে।
তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি, ই এবং বি। সেই সঙ্গে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ডায়াটারি ফাইবার। শক্তাশালী সব অ্যান্টিঅক্সিডন্টও রয়েছে ফলটিতে। টানা ১ মাস তেঁতুল খেলে আমাদের দেহে এমন সব পরিবর্তন আসে যা অকল্পনীয়। এবার চলুন জেনে নিই কি সেই পরিবর্তনগুলো।
১. হজম ক্ষমতা বাড়ায়
বহুকাল ভারি খাবার খাওয়ার পর টক জাতীয় খাবার খেয়ে আসছে মানুষ। তবে সবচেয়ে কার্যকরী যে টক, সেটা হলো তেঁতুল। তেঁতুলের ডায়াটারি ফাইবার হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ নিশ্চিৎ করে। ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও তেঁতুলের বিলিয়াস সাবস্টেন্সও আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত এবং বদ-হজমের আশঙ্কা হ্রাস করে। ক্রনিক কনস্টিপেশনের মতো সমস্যা দূর করতেও তেঁতুল দারুন কাজে আসে। এক কথায় পেটের ভিতরে ঘটে চলা ছোট-বড় প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে এই ফলটি। ফলে যে কোনও ধরনের পেটের রোগ হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
২. হৃৎপিণ্ড চাঙ্গা হয়ে ওঠে
রক্তচাপ বেড়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে তেঁতুল খাওয়াতে বলেন বড়রা। কিন্তু এতে কোনো উপকার হয় বলে জানা যায় না। কিন্তু নিয়মিত খেলে উপকার পাওয়া যায় এটা প্রমাণিত। তেঁতুলের বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে রক্তে উপস্থিত বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। আর যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা আছে যে, হার্টের কর্মক্ষমতা কমাতে ব্লাড প্রেসার এবং কোলেস্টেরল নেতিবাচক ভূমিকা রাখে। তাই শরীর যখন এই দুই ক্ষতিকর রোগ থেকে দূরে থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন তেঁতুল খাওয়া কতটা উপকারী।
৩. রক্ত প্রবাহের উন্নতি ঘটে
তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় আয়রন, যা শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ বাড়ায়। ফলে দেহে রক্তস্বল্পতা দূর করে। আমাদের দেশের সিংহভাগই নারীই অ্যানিমিয়ার শিকার। তাই এদেশে তেঁতুল খাওয়া প্রয়োজনীয়তা যেন আরও অনেক বেশি। আর তেঁতুল যেহেতু নারীদের খুব পছন্দের তাই রক্তস্বল্পতা আক্রান্ত হওয়ার আগেই নিয়মিত তেঁতুল খেয়ে তা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
৪. নার্ভের কর্মক্ষমতা বাড়ে
বি কমপ্লেক্স হল এমন ভিটামিন, যা ব্রেইন ফাংশনের উন্নত করার কাজে অংশ নেয়। এই ভিটামিনটি দেহের স্নায়ুকোষের শক্তি বাড়ায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কগনেটিভ ফাংশনে উন্নতি ঘটে। সঙ্গে বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তিও বাড়তে শুরু করে। আর তেঁতুলে বি কমপ্লেক্স ভিটামনিটি রয়েছে প্রচুর মাত্রায়।
৫. ওজন হ্রাসে সাহায্য করে
তেঁতুল আমাদের দেহে হাইড্রোক্সিসিট্রিক অ্যাসিড বা এইচ সি এ-এর মাত্রা বৃদ্ধি করে। এই উপাদানটি শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ঝরিয়ে ওজন কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এখানেই শেষ নয়, তেঁতুল খাওয়া শুরু করলে এর ফাইবারে খিদে কমিয়ে দেয়। তাই যারা ওজন কমতে চেষ্টা করছেন তারা নিয়মিত তেঁতুল খেতে পারেন।৬. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে তেঁতুল দারুনভাবে কাজ করে। ফলটি কার্বোহাইড্রেটের শোষণ মাত্রা কমিয়ে দিতে সক্ষম। ফল ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। এখন প্রশ্ন করতে পারেন কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে সুগারের কী সম্পর্ক? শরীরে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা বাড়তে থাকলে তা ভেঙ্গে রক্তে শর্করার মাত্রাও বৃদ্ধি করে। সে কারণেই অনিয়ন্ত্রত মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খেতে মানা করেন চিকিৎসকরা।
৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে
প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি থাকায় তেঁতুল শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৃদ্ধি করে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটা শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে শুধু সংক্রমণ নয়, ছোট-বড় কোনো রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।